বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের একটি প্রাকৃতিক বিস্ময়ের নাম মধুপুর গড়। টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ জেলার বিস্তৃত এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই গড়াঞ্চল এক সময় ছিল সবুজ শালবনের রাজ্য। এখন তা হারিয়ে যাচ্ছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, বন উজাড় ও মানব হস্তক্ষেপে। পরিবেশবাদীরা বলছেন, এখনই পদক্ষেপ না নিলে অচিরেই হারিয়ে যাবে দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক ঐতিহ্য।
মধুপুর গড়ের শালবন শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্যই নয়, এটি দেশের জীববৈচিত্র্যের এক গুরুত্বপূর্ণ ভাণ্ডার। এক সময় এ বনাঞ্চলে বাঘ, হরিণ, শেয়াল, বনবিড়ালসহ নানা বন্যপ্রাণীর দেখা মিলত। এখন এসব প্রাণী বিলুপ্তপ্রায়। তবে এখনও কিছু পাখি, বানর ও শিয়ালের উপস্থিতি টিকে আছে।
এখানে বসবাসকারী গারো ও কোচ আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জীবনও জড়িয়ে আছে এই গড়ের সঙ্গে। তাদের জীবিকা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সবই আবর্তিত হয়েছে এই বনকে ঘিরে। তবে বনবিভাগের নিয়ন্ত্রণ, ভূমি দখল ও বনভূমির সীমানা নির্ধারণ নিয়ে আদিবাসীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছেই।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নানা উন্নয়ন প্রকল্পের নামে বন কেটে ফেলা, কৃষিজমি তৈরি ও অবৈধ দখল এখন গড়াঞ্চলের বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শাল গাছের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। মধুপুর জাতীয় উদ্যান হলেও তার বাস্তব রূপ আজ ঝুঁকিতে।
পরিবেশবিদ ও গবেষকরা বলছেন, মধুপুর গড় বাংলাদেশের একটি গঠনগত ব্যতিক্রমধর্মী ভূখণ্ড, যা প্লাইস্টোসিন যুগে গঠিত। এর টিলা, লাল মাটি, প্রাকৃতিক বন ও প্রাণীজগত দেশের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই শুধু কাগজে-কলমে সংরক্ষণের কথা বললে হবে না, বাস্তবিক অর্থে রক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে।
সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সচেতনতা, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমেই টিকিয়ে রাখা সম্ভব মধুপুর গড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঐতিহ্য।