• রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫, ০৬:২৯ অপরাহ্ন

ঈদের দিনে স্বল্প সময়ে অধিক আয় কসাইদের

নিজস্ব প্রতিবেদক / ২২ টাইম ভিউ
আপডেটঃ রবিবার, ৮ জুন, ২০২৫

ঈদে চাহিদা বেড়েছে কসাইদের। নিয়মিত কাজ করেন এমন কসাইয়ের পাশাপাশি মৌসুমী বা ছুটা কসাইয়েরও চাহিদা বেড়েছে। সারা বছর অন্য কাজ করলেও কোরবানির ঈদে বাড়তি আয়ের আশায় একদিনের জন্য কসাই বনে যান তারা।

 

ঈদের কয়েক দিন আগে থেকেই অনেক শ্রমিক, দিনমজুর ও রিকশাচালক নিজেদের কাজ ছেড়ে বিভিন্ন পশুর হাটে এসে বেপারীদের সঙ্গে এবং যারা কোরবানির পশু কিনছেন তাদের সঙ্গে চুক্তি করছেন কসাইয়ের কাজের জন্য। গরুর দাম এর ওপর তাদের শ্রমের মূল্য নির্ধারণ হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে পেশাদার কসাইয়ের চেয়ে মৌসুমি কসাইয়ের মজুরি কিছুটা কম।

কোরবানির নগরে মৌসুমি কর্মযজ্ঞ
রাজধানীর শনির আখড়া হাটে দেখা মিলল ফরিদপুরের সোহান মিয়ার সঙ্গে । রিকশা চালানো ছেড়ে দিয়ে তিনি এখন মৌসুমি কসাই। বললেন, “গত সাত-আট বছর ধরেই ঈদের সময় ঢাকায় আসি। তিন দিনে ১০-১২ হাজার টাকা আয় হয়।”

রায়েরবাগে হাটে খড় বিক্রি করছেন সামসুল মিয়া। পেশায় নির্মাণশ্রমিক হলেও কোরবানির সময় কসাইয়ের কাজ করেন। ‘“আমরা ৬ জন মিলে তিন দিন কাজ করি, ভালো আয় হয়”, বলেন তিনি।

 

বরিশাল থেকে আসা আব্দুল কালাম বলেন, “প্রথমে হাটে সাহায্য করি, পরে ক্রেতাদের বাড়িতে গিয়ে কাজ করি। গত বছর হাজারে ১০০–১২০ টাকা পেয়েছি, এবার ভাবছি ১৫০–২০০ টাকা নেব।”

 

এই সাময়িক কর্মসংস্থান তৈরি করেছে একটি ঈদ-কেন্দ্রিক মৌসুমি অর্থনীতি, যা নগরে ছড়িয়ে পড়ে শ্রমজীবী মানুষের জন্য। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষেরা এতে সরব।

কসাইয়ের সংকট, শহরের নির্ভরতা
শনির আখড়ার স্থানীয় কসাই কোরবান আলী বলেন, “আমরা নিজেরাই গ্রাম থেকে লোক নিয়ে আসি, নইলে এত পশু জবাই করা সম্ভব না। ঢাকায় প্রতি বছর প্রায় ৫-৬ লাখ গরু জবাই হয়।”

তবে তার আশঙ্কাও রয়েছে অধিকাংশ মৌসুমি কসাই পেশাদার না। ভুলে পশু বা মানুষের ক্ষতি হয়, চামড়া নষ্ট হয়, এমনকি দুর্ঘটনাও ঘটে।

 

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা জালাল হোসেন বলেন, “নিবন্ধিত কসাইদের তালিকা করার চেষ্টা চলছে, যাতে অদক্ষ কেউ বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে।”

দক্ষতার ঘাটতি বনাম বাস্তব চাহিদা
প্রতি বছর ঢাকায় প্রায় ১৫–২০ হাজার মৌসুমি কসাই আসেন। তাদের বড় অংশ আসে রাজবাড়ী, ফরিদপুর, কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর, জামালপুর, বরিশাল, রংপুরসহ উত্তরবঙ্গ থেকে। বাস্তবতা হলো, এই অদক্ষ হাতগুলোর ওপরই নির্ভর করছে শহরের কোরবানির বড় অংশ।

 

কিন্তু ধর্মীয় রীতিনীতি মতো কোরবানি নিশ্চিতে চাই অভিজ্ঞতা। কসাই কোরবান আলী বলেন, “এটা শুধু ছুরি চালানোর কাজ না। পশুর শারীরিক গঠন, চামড়ার রেখা, রক্তপাতের নিয়ন্ত্রণ সব জানতে হয়। না হলে পশুর ক্ষতি, এমনকি মানুষেরও বিপদ হতে পারে।”

শহরের ঝুঁকি ও শৃঙ্খলার প্রশ্ন
নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণ ছাড়াই যেসব মৌসুমি শ্রমিক কাজ করছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি তৈরি করছেন। অপরিচিত পরিচয়হীন শ্রমিকরা একত্র হয়ে কাজ নিচ্ছেন, যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্যও মাথাব্যথার কারণ।

 

নগর কর্তৃপক্ষ বলছে, পরিচ্ছন্নতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চেষ্টা চলছে, তবে বাস্তবতা হলো এখনো তা প্রাথমিক পর্যায়ে।

অদক্ষতায় চামড়ার ক্ষতি, শিল্পে ধস
অভিজ্ঞ কসাইয়ের অভাবে পশুর চামড়া ঠিকভাবে ছাড়ানো হয় না। ফলে মূল্যবান এই সম্পদ নষ্ট হয়। প্রতি বছর কোরবানির সময় শত শত কোটি টাকার চামড়া সঠিকভাবে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ না হওয়ার কারণে ক্ষতির মুখে পড়ে চামড়া শিল্প।

এই ক্ষতির একটি বড় কারণ অদক্ষ মৌসুমি কসাইদের ব্যবহারে চামড়া কেটে যাওয়া বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এটি শিল্প সংশ্লিষ্টদের জন্য দীর্ঘদিনের উদ্বেগ।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা আবু বকর বলেন, “এই মৌসুমি কসাইদের কার্যক্রম একটি অনিয়ন্ত্রিত সার্ভিস সেক্টরএ পরিণত হয়েছে। চাহিদা-সরবরাহের এই ভারসাম্যহীনতা একদিকে কোরবানির ধর্মীয় পবিত্রতা, অন্যদিকে জননিরাপত্তা, স্বাস্থ্যবিধি ও অর্থনীতির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।”

তিনি বলেন, “প্রয়োজন একটি সমন্বিত নীতিমালা। যেখানে সিটি করপোরেশন, স্থানীয় সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে একটি নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণ-ভিত্তিক ব্যবস্থা গড়া দরকার। এতে যেমন নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, তেমনি অদক্ষ হাতে নষ্ট হবে না মূল্যবান চামড়া।”

 


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এই বিভাগের আরো খবর