তবে এই রায়ের পাশাপাশি আরো কিছু প্রশ্ন সামনে এসে দাঁড়ায়। মামলার বাকি তিন আসামি খালাস পাওয়ায় আছিয়ার মায়ের হতাশা অমূলক নয়। বাকিদের খালাস নিয়ে মানবাধিকারকর্মী ও আইনজ্ঞরাও প্রশ্ন তুলেছেন।
শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাটি আবারও আমাদের সমাজের এক গভীর ক্ষত উন্মোচন করেছে। কেন একটি নিষ্পাপ শিশুকে এমন ভয়াবহ পরিণতির শিকার হতে হলো? কেন যাদের আশ্রয়ে বড় হওয়ার কথা, তাদের হাতেই ঘটে সর্বনাশ? উন্নয়নশীল দেশে ক্রমবর্ধমান যৌন সহিংসতার পেছনে থাকা সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত কারণগুলো খতিয়ে দেখা এবং এর প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
অন্যদিকে সাইবার বুলিং বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হেনস্তা ও ডিজিটাল নির্যাতন মাত্রা ছাড়িয়েছে। অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ ২০২২ সালে একটি গবেষণায় দেখিয়েছিল, বাংলাদেশে ৬৪ শতাংশ নারী কোনো না কোনোভাবে অনলাইন নির্যাতন ও ভায়োলেন্সের শিকার হন। জুলাই অভ্যুত্থানের সময় থেকে এ পর্যন্ত এই ভায়োলেন্সের হার সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে। গণ-অভ্যুত্থানের নারী সমন্বয়ক ও সক্রিয় কর্মীদের আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অকল্পনীয় ও অকথ্য নির্যাতনের শিকার হতে দেখছি। অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা শিখতে পারি।
বাংলাদেশে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা চালু রয়েছে। তার পরও নারী ও শিশু নির্যাতনের চিত্র উদ্বেগজনক। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, নারী ও শিশু নির্যাতনের ৬৪ শতাংশই ধর্ষণের ঘটনা। এই পরিস্থিতিতে শুধু কঠোর শাস্তি নয়, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার ওপর জোর দেওয়া জরুরি। পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সচেতনতা বৃদ্ধি, সামাজিক মূল্যবোধের জাগরণ এবং আইনের কার্যকর প্রয়োগের মাধ্যমেই একটি নিরাপদ সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব। একই সঙ্গে আইনি দুর্বলতা দূর করা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর দক্ষতা বৃদ্ধি করা অত্যাবশ্যক।