সফল আম চাষিদের একজন নওগাঁর পোরশা উপজেলার সাওর গ্রামের হুমায়ুন আলী। বড় ভাই আবু বাক্কারের দেখাদেখি তিনিও বছর দশেক আগে প্রায় ৯ বিঘা জমিতে আম্রপালি জাতের আম চাষ শুরু করেছিলেন। ৯ বিঘা জমিতে একসময় শুধু বছরে একবার ধান চাষ করতে পারতেন। তখন লোকসানও হতো। গোদাগাড়ীর রিষিকুল এলাকার আম চাষি আনছার আলী জানান, ‘৮-১০ বছর আগেও যেখানে এক বিঘা জমি থেকে কৃষক পেতেন বড়জোর ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার ধান। সেখানে এখন তাঁরা প্রতি বিঘা জমি থেকে বছরে আম বিক্রি করেই পাচ্ছেন ৫০ হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকা। সাপাহার উপজেলা সদর এলাকার মানিকুড়া গ্রামের এনামুল হকের পরিবার ছিল হতদরিদ্র। নিজস্ব জমাজমিও নেই। ২০১৪ সালে আট হাজার টাকা বিঘা হারে অন্যের পাঁচ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে সেই জমিতে আমবাগান তৈরি করেন এনামুল। এর পর সেই বাগানে হাড় ভাঙা খাটুনি খেটে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেন। দুই বছর পরই সেই জমি থেকেই প্রায় তিন লাখ টাকা আয় করেন। এলাকায় তিনি এখন কোটিপতি নামে পরিচিত। বর্তমানে প্রায় ৪০০ বিঘা জমিতে রয়েছে তাঁর আমবাগান। এনামুল বলেন, এখন আমার আমবাগানেই প্রতিদিন ৬০ জন শ্রমিক কাজ করে। আমাকেও আর পরের জমিতে কাজ করতে হয় না। চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটের আম চাষি ফরহাদ উদ্দিন জানালেন, ‘বাপ-দাদার আমল থেকেই আম চাষ করেন তাঁরা। তাঁর নিজের বাগানই আছে ৩০ বিঘা জমিতে। অন্য দুই ভাইয়ের আছে আরো প্রায় ৪০ বিঘা। বছরে আম বিক্রি করেই অন্তত ৩০ লাখ টাকা আয় করেন। রাজশাহীর সর্ববৃহৎ আমের বাজার হলো পুঠিয়ার বানেশ্বরে। এই বাজারে এখন প্রতিদিন গড়ে অন্তত ২০ ট্রাক আম বেচাকেনা হচ্ছে। এর বাইরে জেলার বিভিন্ন বাজার ও মোড়ে মোড়েও আমের বেচাবিক্রি জমে উঠেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট, গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট, সাপাহার, নিয়ামতপুর, মহাদেবপুর, পোরশায় বৃহৎ বাজার বসে আমের। চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. ইয়াছিন আলী বলেন, এ জেলায় ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমিতে নানা জাতের আমচাষ হয়েছে। চলতি বছর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন লাখ ৮৬ হাজার ২৯২ টন। এখান থেকে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা আয় হবে বলেও তাঁরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। গত ১০ বছরে প্রায় ১৩ হাজার ২৪৪ হেক্টর জমিতে আম চাষ বেড়েছে এ জেলায়। জেলার আম গবেষণাকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোখলেসুর রহমান বলছিলেন, জেলার চাষিরা আমের চাহিদা মিটিয়ে প্রতিবছর প্রায় দুই থেকে তিন লাখ টন আম দেশের বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিকভাবে সরবরাহ করেন। এ ছাড়া কয়েক বছর ধরে এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের কয়েকটি দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে এই জেলার আম। গত বছর জেলা থেকে এক হাজার ৩৩ টন আম রপ্তানি হয়েছে বিদেশের মাটিতে। ইউরোপ-আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানির পর বৃহত্তর রাজশাহীর আম এবার যাবে চীনেও। গত বছর শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকেই এশিয়ার ১১টি দেশ, মধ্যপ্রাচ্যের তিনটি এবং ইউরোপের সাতটি দেশে আম রপ্তানি করা হয়েছে।