চায়না ৩ লিচু
চায়না ৩ লিচু | |
---|---|
প্রজাতি | লিচু |
চাষকৃত উদ্ভিদ | চায়না-৩ |
চায়না ৩ (ইংরেজি: China 3) লিচু ফলের একটি প্রকারভেদ হল চায়না ৩।[১][২] বিজ্ঞানীরা নানা জাতের লিচু উদ্ভাবন করেছেন, তার মধ্যে ‘চায়না ৩’ জাত রয়েছে।[৩][৪][৫] চায়না-৩ লিচুটি বারি লিচু-৩ নামেও পরিচিত। এটি একটি নাবী (সবশেষে পাওয়া যায়) জাতের লিচু এবং লিচুর সকল জাতের মধ্যে আকার, কোষের গড়ন এবং স্বাদের বিচারে বর্তমানে এটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে উন্নত জাত।[৬][৭] দেশের উত্তারাঞ্চলে এ জাতটি চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী।[৮]
এ জাতের গাছ ছোট থেকে মাঝারি আকারের হয়ে থাকে, গড় উচ্চতা প্রায় ৫ থেকে ৬ মিটার হয়। গাছপ্রতি গড় ফলন ১০৪ কেজি, তবে প্রতিবছরই বা নিয়মিতভাবে ফল ধরেনা।[৯] এ জাতের লিচু ফল মোটামুটি বড় গোলাকার হয় এবং গড় ওজন প্রায় ২৫-৩০ গ্রাম। টিএসএস-১৮%। খাবারযোগ্য অংশ ও বীজের সমানুপাত ১৫ঃ ১।[১০]
বিবরণ
[সম্পাদনা]
চায়না-৩ লিচু জুন মাসের শেষ সপ্তাহে পাকে, এবং পাকার পর খোসার রঙ পুরোপুরি লাল হয় না, লালের মধ্যে কমলা রঙের ছোপ থাকে, অর্থাৎ পাকা অবস্থায় কাঁচা কাঁচা ভাব নেয়। এই জাতের ফল কাঁচা ও পাকা অবস্থায় বেশ মিষ্টি ও স্বাদে অতুলনীয়, শাঁস সাদা, অত্যন্ত মিষ্টি, রসাল, নরম, সুগন্ধযুক্ত ও পুরু। এই লিচুর বীজ খুব ছোট হয় এবং পরিপক্কতার সাথে সাথে বীজ শুকাতে থাকে এবং চিকন ও লম্বা হয়। পাতার আকার মধ্যম আকারের ও অনেকটা দুই দিকে মোড়ানো নৌকার মত দেখা যায়। চায়না ৩ জাতের লিচু ফল বড় হওয়ার পর অর্থাৎ ফল পুষ্ট হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে ফাটা শুরু করে।[১১] সাধারণত এই জাতের লিচু গুটি কলমের হয়ে থাকে তাই চারা বেশ দুর্বল হওয়ায় নিয়মিত সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং বেশি যত্নের দরকার পরে। অন্যান্য জাতের থেকে এই জাতে পোকার আক্রমণ তুলনামুলক বেশি হয়ে থাকে।[১২][১৩]
চাষ
[সম্পাদনা]
জাতের ওপর লিচুর ফলন ও স্বাদ বহুলাংশে নির্ভর করে।[১৪] বাংলাদেশে চাষকৃত লিচুর মধ্যে চায়না-৩ হল সবচেয়ে ভালো জাত।[১৫][১৬][১৭] চায়না-৩ জাতের লিচু বর্তমানে দেশের প্রায় সব জেলাতেই কম-বেশি চাষ হচ্ছে কিন্তু বৃহত্তর রাজশাহী, দিনাজপুর, বগুড়া, পাবনা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, ময়মনসিংহ, সুনামগঞ্জ ও চট্টগ্রাম জেলায় বেশি পরিমাণে লিচু উৎপন্ন হয়।[১৮] এমনকি বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকাতেও এ জাতের লিচুর চাষ এবং ফলন দিন দিন বেড়ে চলেছে।[১৯][২০]
চায়না-৩ লিচুর অযৌন বংশবিস্তারের জন্য গুটি কলম একটি চমৎকার প্রক্রিয়া হিসেবে সর্বত্র স্থানেই স্বীকৃত। রোগ ও পোকা মাকড় মুক্ত স্বাস্থ্যবান গাছের এক বছর বয়সের ডালে গুটিকলম করা হয়। মে–জুন মাস চায়না-৩ লিচুর গুটি কলম বাঁধার উপযুক্তসময়। শিকড় আসতে প্রায় দু’মাস সময় নেয়। চায়না-৩ লিচু চাষ করতে হলে উঁচু বা মধ্যম উঁচু জমি বাছাই করতে হবে। চাষের মাধ্যমে জমি সমপৃষ্ঠ এবং আগাছামুক্ত করতে হবে। বাসস্থানের খালি জায়গাতে দু’একটি গাছ রোপণ করতে চাইলে জমি প্রস্তুত না করে সরাসরি গাছ রোপণ করলেই হবে। সমতল ভূমিতে বর্গাকার প্রক্রিয়াতে রোপণ করাই শ্রেয়। পাহাড়ী এলাকায় কন্টুর পদ্ধতিতে গাছ রোপণ করা হয়ে থাকে। এক বছর বয়ষ্ক সুস্থসবল গুটি কলমের চারা নির্বাচন করতে হবে। বড় চারা রোপণ না করাই শ্রেয়।[২১] মধ্য–মে থেকে মধ্য-জুলাই এবং মধ্য-আগস্ট থেকে মধ্য-সেপ্টেম্বরের শেষপর্যন্ত চারা রোপণ করা যায়। ৮ মিটার × ৮ মিটার কিংবা ১০ মিটার × ১০ মিটার ব্যবধানে চারা বপন করতে হবে। গর্তের আকার: ১ মিটার × ১ মিটার × ১ মিটার হওয়া প্রয়োজন।[২২] চারা রোপণের ১০–১৫ দিন আগে গর্ত তৈরি করতে হবে এবং সার ও মাটি মিশিয়ে গর্তটি ভরাট করতে হবে। চারা বপণের সময় সাবধানে চারাটি গোড়ার মাটিরবল সহ গর্তের মাঝামাঝি সোজাভাবে লাগাতে হবে। চারা রোপণের করার পর পানি, খুটি ও চারার প্রতিরক্ষা হিসেবে বেড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। কিংবাণের ৬ মাস পরে ইউরিয়াসার উপরি প্রয়োগ করতে হয়। প্রত্যেকটি গাছেই ইটের বা বাঁশের ঘের দেয়া প্রয়োজন। একটি পূর্ণ বয়সের ফলন্ত গাছের জন্য বাৎসরিক মাত্রা অনুযায়ী সার প্রয়োগকরতে হবে। বর্ষার আগে বা বর্ষার পরে সার উপরি প্রয়োগ করা বাঞ্ছনীয়।[২৩]
গ্যালারি
[সম্পাদনা]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]