তাই সঠিক মাত্রায় জিংক গ্রহণও খুবই জরুরি।
► উৎস : মসুর ডাল, শিম, মিষ্টিকুমড়ার বীজ, তিল, কাজুবাদাম, চিনাবাদাম ও গোটা শস্য।
আয়রন
শরীরে আয়রনের ঘাটতি হলে রক্তের হিমোগ্লোবিন উত্পাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি থাইরয়েড হরমোন উত্পাদনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। হাইপোথাইরয়েডিজমের প্রকোপও বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই সুষম মাত্রায় আয়রন গ্রহণ জরুরি।
► আমিষ উৎস : সামুদ্রিক মাছ, লাল মাংস, লিভার ও ডিমে প্রচুর আয়রন আছে।
► নিরামিষ উৎস : মসুর ডাল, টোফু, শাক-সবজি (যেমন—পালংশাক), শুকনো ফল এবং বাড়তি আয়রনযুক্ত বিশেষায়িত শস্য।
সঠিক মাত্রায় আয়রন শোষণ নিশ্চিত করতে ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবারের সঙ্গে আয়রনসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা উচিত। এর মধ্যে আছে সাইট্রাসজাতীয় টক ফল, যেমন—লেবু।
গলগণ্ডের ঝুঁকি কমান
কিছু খাবারের প্রভাবে গলগণ্ডের প্রকোপ ও ঝুঁকি বেড়ে যায়। এর মধ্যে আছে বাঁধাকপি, ব্রকোলি, কেইল, সয়া ও বাজরা। তবে খাদ্যতালিকা থেকে একেবারেই বাদ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। ঝুঁকি কমাতে সবজিগুলো রান্না করে খাওয়া উচিত। এতে গলগণ্ডের ওপর প্রভাব কমবে অনেকটাই। তবে এসব খাদ্য গ্রহণ করলে সঙ্গে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়োডিন গ্রহণ করাও জরুরি। ফারমেন্ট করা সয়া, যেমন—সয়া সস গ্রহণেও তেমন ঝুঁকি নেই।
পরিমিত সয়া গ্রহণ করুন
সয়াতে এমন কিছু যৌগ থাকে, যা থাইরয়েডের কার্যকলাপে হস্তক্ষেপ করে। পর্যাপ্ত আয়োডিনের পাশাপাশি পরিমিত পরিমাণে সয়াজাত খাবার খেলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা নিরাপদ। তবে যাঁদের শরীরে আয়োডিনের ঘাটতি অথবা থাইরয়েডের সমস্যা রয়েছে, তাঁদের উচ্চমাত্রায় সয়াজাত খাবার গ্রহণ একেবারেই অনুচিত। যদি খেতেই হয়, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
থাইরয়েড ওষুধ গ্রহণে সতর্কতা
উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার গ্রহণের পরপর থাইরয়েডের ওষুধ সেবন করা যাবে না। এতে ওষুধের কার্যকারিতা অনেকাংশে নষ্ট হবে। লেভোথাইরক্সিনজাতীয় ওষুধ যাঁরা গ্রহণ করছেন, তাঁদের অবশ্যই সকালের নাশতা বা উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার গ্রহণের অন্তত আধাঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা আগে সেটি খালি পেটে গ্রহণ করতে হবে।
ফাইবার সম্পূরক বা ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবারের সঙ্গে ওষুধটি গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন; না হলে ওষুধটির শোষণ ব্যাহত হতে পারে।
কী খাবেন
চেষ্টা করতে হবে ফলমূল ও শাক-সবজি বেশি করে খাওয়ার। এতে শরীরে প্রয়োজনীয় অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের পাশাপাশি সঠিক মাত্রায় ভিটামিন ও খনিজও নিশ্চিত করা যাবে। চেষ্টা করতে হবে পূর্ণ শস্য গ্রহণের, এতে প্রয়োজনীয় পুষ্টির পাশাপাশি ফাইবারও পাওয়া যাবে। প্রোটিনের জন্য লাল মাংসের পরিবর্তে মুরগি, ডিম, মাছ, ডাল এবং বিভিন্ন ধরনের বীজ খাওয়া যেতে পারে। বাদাম বা জলপাইয়ের তেল হতে পারে স্বাস্থ্যকর চর্বির চমৎকার উৎস।
ভিটামিন-ডি গ্রহণ করা জরুরি
থাইরয়েডের অটো-ইমিউন রোগের সঙ্গে ভিটামিন-ডির ঘাটতি সরাসরি সম্পৃক্ত। তাই প্রতিদিন কিছু সময় রোদে কাটানো জরুরি, পাশাপাশি গ্রহণ করতে হবে ভিটামিন-ডিযুক্ত খাবার। যাঁদের শরীরে ভিটামিন-ডির অতিরিক্ত ঘাটতি আছে, তাঁদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে ভিটামিন-ডি সম্পূরক গ্রহণ করতে হবে।
প্রক্রিয়াজাত খাবার বাদ দিন
চিনিযুক্ত পানীয় এবং প্রক্রিয়াজাত ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবার গ্রহণ যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। এ ধরনের খাবার শুধু থাইরয়েডের বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি বা প্রকোপ বৃদ্ধিই করে না, পাশাপাশি শরীরের অন্যান্য অঙ্গেরও বড় ক্ষতি করে।
মনে রাখতে হবে
স্বাস্থ্যের অবস্থা, খাদ্যাভ্যাস এবং শরীরের সার্বিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে প্রতিটি ব্যক্তির পুষ্টিচাহিদা। তাই সর্বজনীন থাইরয়েড ডায়েট নয়, প্রত্যেকের জন্য আলাদা খাদ্যাভ্যাস গড়া জরুরি। থাইরয়েড সমস্যা নিরসনের প্রতিশ্রুতি দেয় এমন ভাইরাল ডায়েট প্ল্যান স্বাস্থ্যের জন্য চরম ক্ষতিকর হতে পারে। মনে রাখতে হবে, ডায়েটের মাধ্যমে থাইরয়েড স্বাস্থ্য ধরে রাখার জন্য অতিরিক্ত খাবার এড়িয়ে প্রয়োজনীয় পুষ্টির পর্যাপ্ত পরিমাণ গ্রহণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
লেখক : অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর
ডিপার্টমেন্ট অব এন্ডোক্রাইনোলজি
বিএমইউ, ঢাকা