সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মৎস্য ঘেরে লবণাক্ত পানি প্রবাহের জন্য পাইপলাইন স্থাপন করায় বেড়িবাঁধের নিচের মাটি দুর্বল হয়ে পড়েছিল।
ফলে এই ভাঙনের সৃষ্টি হয়। ভাঙন প্রতিরোধে অবিলম্বে জরুরি উদ্যোগ নেওয়া না হলে সাতক্ষীরার এই অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্লাবিত গ্রামগুলো হলো আনুলিয়ার বিছট, বল্লভপুর, আনুলিয়া, নয়াখালী, চেঁচুয়া, কাকবসিয়া, পারবিছুট ও বাসুদেবপুর।
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) আশাশুনি উপজেলার টিম লিডার আবদুল জলিল বলেন, ‘আমরা যখন নামাজরত অবস্থায় ছিলাম তখন হঠাৎ শুনি বাঁধ ভেঙে গেছে।
আমরা মোনাজাত না করেই ছুটে যাই। গ্রামবাসী মিলে অস্থায়ীভাবে বাঁধ রক্ষা করতে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু দুপুরের জোয়ারের পর সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। মূল যে পয়েন্টটি ভেঙেছে, সেটাতে একটি পাইপলাইন ও গেট সিস্টেম ছিল। যতগুলো ভাঙন পয়েন্ট রয়েছে, সবই পাইপলাইনের কারণে হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘পানিবন্দি মানুষ এখন খাবারসংকটে পড়েছে। অনেক পরিবার উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ শুরু করলেও এখনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।’
আনুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, বাঁধ ভেঙে প্রবল জোয়ারের পানিতে গ্রামগুলোর চার হাজার বিঘা জমির ধান ও ২০০ বিঘার বেশি চিংড়িঘের তলিয়ে গেছে। ৭০০ থেকে ৮০০ বাড়িঘর পানির নিচে ডুবে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মানুষ এখন দুর্বিষহ পরিস্থিতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। ভাঙনের পরপরই গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বিকল্প রিং বাঁধ তৈরির চেষ্টা করলেও প্রবল জোয়ারের তোড়ে তা ধসে পড়ে। ফলে নতুন করে আরো বেশি এলাকায় পানি ঢুকে পড়ে।
সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন জানান, ভাঙনকবলিত এলাকার ৩০০ মিটারজুড়ে রিং বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে। জোয়ারের কারণে কাজে কিছুটা সমস্যা পোহাতে হচ্ছে। নদীতে ভাটা শুরু না হওয়ায় কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার কাজ করা গেলে একটা পর্যায়ে আসবে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘আশাশুনির বিছট গ্রামে খোলপেটুয়া নদীর পাশে পাউবোর বেড়িবাঁধ রয়েছে। কিন্তু সোমবার সেটার ১০০ মিটার অংশ ভেঙে গেছে। এতে ৮ থেকে ১০টি গ্রামে পানি ঢুকেছে। আমি খবর পাওয়ার পরপরই পাউবোকে জরুরি নির্দেশনা দিয়েছি। তবে ঈদের কারণে শ্রমিক সংকট ও নৌকায় করে বালু আনতে দেরি হওয়ায় কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি সকালেই ঘটনাস্থলে এসে দেখেছি, পরিস্থিতি ভয়াবহ। আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে না পারলে পরে জোয়ারে আরো প্রায় আধা কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে যেতে পারে। এরই মধ্যে সাতক্ষীরা পাউবোর দুটি বিভাগ একত্রে কাজ শুরু করেছে। স্থানীয়রা আমাদের সহযোগিতা করছে, আমরা যত দ্রুত সম্ভব বাঁধটি মেরামতের চেষ্টা করছি।’
দুর্যোগ মোকাবেলায় সেনাবাহিনী : আইএসপিআর জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের আশাশুনি আর্মি ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার, ইউএনও এবং পাউবোর প্রতিনিধি বিছট গ্রামে ভেঙে যাওয়া বাঁধ ও প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেন এবং সংকট নিরসনের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেন। বর্তমানে আশাশুনি ক্যাম্প থেকে দুটি পেট্রল টিম এলাকাটিতে অবস্থান করে স্থানীয় লোকজন এবং প্রশাসনকে বাঁধ মেরামতের কাজে সর্বাত্মক সহায়তা দিচ্ছে। এ ছাড়া ৫৫ পদাতিক ডিভিশন থেকে ইঞ্জিনিয়ার্স ব্যাটালিয়নের একটি দলকে বাঁধ মেরামতের জন্য সেখানে পাঠানো হয়েছে।