স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনার কাছে বিধ্বস্ত হয়ে যেন হুঁশ ফিরেছে রিয়াল মাদ্রিদের। ওই ম্যাচের পর থেকে দুর্দান্ত পারফর্ম করে চলেছে লা লিগা চ্যাম্পিয়নরা।
গত বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) কোপা দেল রের শেষ ষোলোর ম্যাচে সেল্তা ভিগোকে বিধ্বস্ত করার পর এবার লা লিগায় লাস পালমাসের ওপরও রোলারকোস্টার চালিয়েছে কার্লো আনচেলত্তির শিষ্যরা।
সান্তিয়াগো বের্নাবেউতে রবিবার (১৯ জানুয়ারি) লিগের ২০তম রাউন্ডের ম্যাচে পালমাসকে ৪-১ গোলে হারিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ।
এটুকু বললে বোধহয় “গোলউৎসব” শব্দটির যথার্থতা প্রকাশ পেল না। ম্যাচে রিয়ালের আরও তিনটি গোল অফসাইডে কাটা পড়ে, যার একটি ছিল পরিষ্কার বৈধ গোল।
এ দিন রেফারি ম্যাচ শুরুর বাঁশি বাজানোর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই গোল পেয়ে যায় লাস পালমাস। ম্যাচের ২৮ সেকেন্ডের মাথায় সান্দ্রো রামিরেসের পাঠানো ক্রস নিখুঁত নৈপুণ্যে জালে জড়িয়ে দেন ফাবিও সিলভা। এটি যেকোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে দ্বিতীয় দ্রুততম গোল খাওয়ার রেকর্ড রিয়ালের।
২০১১ সালে লস ব্লাঙ্কোসদের বিপক্ষে দ্রুততম গোলের রেকর্ডটি গড়েন রায়ো ভায়েকানোর মিগেল “মিচু” পেরেস। শেষ পর্যন্ত ওই ম্যাচটিও বড় ব্যবধানে জিতে নিয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। ৬-২ গোলের সেই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। এছাড়া করিম বেনজেমা দুটি ও গন্সালো হিগুয়েন অপর গোলটি করেন।
এদিন প্রথম মিনিটেই ১-০ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর শুরু হয় রিয়ালের আক্রমণ-ঝড়। ম্যাচজুড়ে মোট ২৬ শট নেয় দলটি, যার ১৩টি ছিল লক্ষ্যে। এর মাঝে অষ্টাদশ মিনিটে পেনাল্টি থেকে রিয়ালকে সমতায় ফেরান কিলিয়ান এমবাপ্পে। এরপর ৩৩তম মিনিটে পাল্টা আক্রমণে গিয়ে বক্সের বাইরে থেকে এমবাপ্পের নেওয়া শটটি ফিরিয়ে দেন পালমাস গোলরক্ষক জ্যাসপার সিলেসেন, তবে ফিরতি বল পেয়ে ছয় গজ বক্সের মধ্যে ব্রাহিম দিয়াসের সামনে পাঠান লুকাস ভাসকেস। সেখান থেকে গোল করা দিয়াসের জন্য ছিল নিয়মিত অনুশীলনের চেয়েও সহজ।
এর তিন মিনিট পরই রদ্রিগোর অ্যাসিস্টে দ্বিতীয় গোল পেয়ে দলের ব্যবধান বাড়ান এমবাপ্পে। ৪২তম মিনিটে আরও একটি গোল পান তিনি, তবে ভিডিও রিভিউয়ের পরও অদ্ভুত সিদ্ধান্ত নিয়ে অফসাইডের কারণে গোলটি বাতিল করে দেন রেফারি।
ভিডিওতে দেখা যায়, প্রথমে এমবাপ্পে যখন বল ধরবেন, তার আগেই প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডার তা ফিরিয়ে দেন। সেখান থেকে ফের যখন এক সতীর্থ থ্রু বল বাড়ান তা ধরে এগিয়ে গিয়ে গোল করেন তিনি।
প্রথমবার সামান্য ব্যবধানে অফসাইড থাকলেও বল ধরে প্রতিপক্ষ; দ্বিতীয়বার তিনি অফসাইড ছিলেন না। তাছাড়া প্রথমবারের পর খেলার মাত্রা নতুন করে শুরু হয়। তবে সবকিছু উড়িয়ে দিয়ে গোঁ ধরে অফসাইডের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন রেফারি। ফলে হ্যাটট্রিক করা থেকে বঞ্চিত হন ফরাসি তারকা।
হ্যাটট্রিক না পেলেও স্পট কিক থেকে এদিন ক্লাব ক্যারিয়ারে নিজের ৩০০তম গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন এমবাপ্পে। আর জোড়া গোলে ক্লাব ক্যারিয়ারে তার মোট গোলসংখ্যা এখন ৩০১। এর মধ্যে শৈশবের ক্লাব মোনাকোর হয়ে ২৭টি, পিএসজির জার্সিতে ২৫৬টি এবং রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে এ পর্যন্ত ১৮টি গোল করেছেন তিনি।
এছাড়া চলতি মৌসুমে মাদ্রিদে যোগ দেওয়ার পর সব মিলিয়ে ৩০ ম্যাচে ২১ গোলে অবদান (১৭ গোল ও ৪ অ্যাসিস্ট) রাখলেন ২০১৮ বিশ্বকাপজয়ী এই স্ট্রাইকার।
স্কোরলাইন ৩-১ এ রেখে বিরতি থেকে ফিরে ৫৭তম মিনিটে রিয়ালের চতুর্থ গোলটি করেন রদ্রিগো। এরপর ৬৪তম মিনিটে লুকাস ভাসকেসকে ফাউল করে সরাসরি লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় লাস পালমাসের বেনিতো রামিরেসকে। ফলে দুর্দান্ত রিয়ালের সামনে বাকি সময়ের জন্য আরও দুর্বল হয়ে পড়ে তারা।
পরে ৭৩ ও ৮৬তম মিনিটে জুড বেলিংহ্যাম ও ফেদেরিকো ভালভের্দে আরও দুটি গোল করলেও সেগুলো অফসাইডের কারণে বাতিলের খাতায় চলে যায়। ফলে ৪-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে রিয়াল মাদ্রিদ।
এই জয়ে ২০তম রাউন্ড শেষে ফের পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠল কার্লো আনচেলত্তির দল। ১৪ জয় ও ৪ ড্রয়ে ৪৬ তাদের পয়েন্ট এখন ৪৬। সমান সংখ্যক ম্যাচ খেলে যথাক্রমে ২ ও ৭ পয়েন্টে পিছিয়ে পড়েছে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে থাকা আতলেতিকো মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা।