• শনিবার, ০৭ জুন ২০২৫, ০৭:৩৯ অপরাহ্ন

হাজার বছরের পুরনো হজপথের সন্ধানে

নিজস্ব প্রতিবেদক / ৪৭ টাইম ভিউ
আপডেটঃ সোমবার, ২৬ মে, ২০২৫

হজের মৌসুম শুরু হয়েছে। সারা পৃথিবী থেকে হজযাত্রীরা মক্কার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছেন। অনেকেই তাঁদের বিমান ফ্লাইটের অপেক্ষায় আছেন। কিন্তু কেউ কেউ আবার ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করছেন না।

তাঁরা কিছুটা ভিন্নভাবে মক্কার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছেন। স্পেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় হুয়েলভা শহর থেকে তিনজনের একটি দল মক্কার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছে আরো ছয় মাস আগে। তারা ঘোড়ায় চড়ে স্থলপথে পবিত্র ভূমিতে আগমন করেছে। এ জন্য তাদের পাড়ি দিতে হয়েছে সাত হাজার কিলোমিটার পথ।
যাত্রীদল দক্ষিণ ইউরোপ হয়ে তুরস্কে পৌঁছে। সেখান থেকে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে সৌদি আরবে আসে। 

এখন থেকে প্রায় ৩০ বছর আগে এই উচ্চাভিলাষী অভিযাত্রার চিন্তা করেছিলেন ড. আবদুল্লাহ হার্নান্দেজ। তখন তিনি স্পেনের ভূগোল ও ইতিহাসের শিক্ষক হওয়ার জন্য লেখাপড়া করছিলেন।

যদিও তিনি তাঁর দেশের ইতিহাসের বিভিন্ন অধ্যায় মুখস্থ করেছিলেন, তবু তিনি আলোড়িত হয়েছিলেন একটি কথা ভেবে যে এটা ছিল আল আন্দালুজ। আইবেরীয় উপদ্বীপের মুসলিম রাজ্য, বিশেষত অষ্টম শতাব্দীর হজযাত্রীর তীর্থযাত্রা তাঁর হৃদয় স্পর্শ করেছিল। মুসলিম ইতিহাস ও সংস্কৃতি তাঁকে এতটাই মুগ্ধ করেছিল যে তিনি নিজের কাছে অঙ্গীকার করেছিলেন—একদিন তিনি মুসলিম হবেন এবং পূর্বপুরুষদের পদচিহ্ন অনুসরণ করে হজ করবেন। 

https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2025/05. May/24-05-2025/kalerkantho-il-1a.jpgদলের একজন আবদুল কাদের হারকাসসি বলেন, যাত্রাপথের প্রতিটি দিন ছিল একেকটি অর্জন। এত কঠিন ও দুঃসাহসী যাত্রার পরও আমরা আমাদের অর্জনের জন্য আনন্দিত।

প্রতি রাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পথচলার পর আমরা রাত যাপনের উপযুক্ত জায়গা খুঁজে পেতাম। অবশেষে আমরা গন্তব্যে পৌঁছতে পেরেছি আলহামদুলিল্লাহ! একটি মুসলিম পরিবারেই আবদুল কাদেরের জন্ম। তাঁর দাদি উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে মরক্কোয় অবস্থানকালে তাঁর দাদাকে বিয়ে করার আগে মুসলিম হন। 

যাত্রীদল জানায়, মরক্কো-আলজেরিয়ার সীমান্ত বন্ধ থাকায় এবং লিবিয়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করায় তাদের পক্ষে উত্তর আফ্রিকা অতিক্রম করা সম্ভব হয়নি, যা ছিল আন্দুলুসীয় হজযাত্রীদের প্রকৃত হজপথ। কয়েক বছরের প্রস্তুতি এবং ছয় মাসের দীর্ঘ সফরের মাধ্যমে তারা বার্তা দিতে চায় যে স্প্যানিশ মুসলমানের অস্তিত্ব এখনো টিকে আছে।

আবদুল কাদের বলেন, গত শতাব্দীতে দীর্ঘ যাত্রায় ঘোড়ার ব্যবহার ছিল জনপ্রিয়। অবশ্য কোনো কোনো হজযাত্রী মরুভূমি অতিক্রম করতে উট ব্যবহার করতেন। বর্তমান যুগে একই ঘোড়ায় আরোহণ করে সাত হাজার কিলোমিটার অতিক্রম করা একটি বড় সাফল্য। আমরা বিগত কয়েক বছর ধরে প্রত্যেক শীত ও গ্রীষ্মে দুই সপ্তাহের প্রশিক্ষণে অংশ নিতাম। আমরা স্পেনের পূর্ব থেকে পশ্চিম এবং উত্তর থেকে দক্ষিণে ছুটে বেড়াতাম। এমনকি পর্তুগালে চলে যেতাম। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের পাথেয়, ঘোড়া, কাপড়, আমাদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা এবং পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্ক যাচাই করার অবকাশ। অতীতে মানুষ যখন হজযাত্রা করত, তখন সীমানা ছিল উন্মুক্ত। হজযাত্রার মানচিত্রও ছিল। কিন্তু বর্তমানে সড়কপথের হজযাত্রীদের জন্য কোনো মানচিত্র নেই, ঘোড়ার আরোহীরা তো অনেক দূরের বিষয়। এরপর আধুনিক আইন-কানুনের জটিলতা তো আছেই। কিন্তু আল্লাহ আমাদের যাত্রা সহজ করেছেন।

যাত্রাপথে তারা বিচিত্র অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। বেশির ভাগ শহরের তারা উষ্ণ অভ্যর্থনা লাভ করেছে, বিশেষ করে বসনিয়ায় প্রবেশের পর থেকে, যখন তারা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল অতিক্রম করে। তুরস্কে তারা গভর্নর ও মন্ত্রীদের সাক্ষাৎ পেয়েছে। এমনকি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানও সাক্ষাৎ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দেশব্যাপী বিক্ষোভের কারণে শেষ মুহূর্তে তা বাতিল করা হয়।

তিনি আরো বলেন, বাশার আল আসাদের পতনের পর সিরিয়ার জনগণ যখন উল্লাসে মেতে ছিল তখন আমরা সিরিয়া অতিক্রম করি। তারা আমাদের দেখে আনন্দিত হয়। কেননা স্প্যানিশ মুসলিমদের সিরীয়রা নিজেদের সন্তান মনে করে। কেননা উমাইয়া শাসনের সময় সিরীয় মুসলিমরা স্পেনে বসতি স্থাপন করেছিল। সিরিয়ার ইতিহাস, শিল্প ও সাহিত্যে স্প্যানিশ মুসলমানের প্রসঙ্গ নানাভাবে এসেছে।

দীর্ঘ এই পথযাত্রা তাদের কিভাবে সমৃদ্ধ করেছে সে বর্ণনাও দিয়েছেন আবদুল কাদের। তিনি বলেন, আপনি যখন সড়কপথে যাবেন তখন গ্রামীণ অঞ্চল, প্রাণিকুল, গাছগাছালি ও আবহাওয়ার স্পর্শ অনুভব করবেন। এতে অন্তর্দৃষ্টি তৈরি হবে। ফলে আপনি মেঘের গতিবিধি বুঝতে পারবেন এবং মোবাইল ফোনের দিকে না তাকিয়েই কিবলা কোন দিকে বলতে পারবেন। এ ছাড়া আমাদের দেখে বহু মানুষের ভুল ধারণা ভেঙেছে। তাঁরা আমাদের বলেছেন, টেলিভিশনের পর্দায় দেখা মুসলমানের সঙ্গে আপনার পার্থক্য আছে।

সূত্র : নিউ আরব ডটকম


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এই বিভাগের আরো খবর