বৈঠকে অংশ নেওয়ার পর এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘আমরা বৈঠকে বলেছি, বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় বাড়াতে হবে। এ জন্য একটি রাজনৈতিক সমন্বয় টিম গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলাম, যা বাস্তবায়িত হয়নি। তিনি আরো বলেন, পরে ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ গঠন করা হলেও সেটির দায়িত্ব ছিল সংস্কার নিয়ে কাজ করা; রাজনৈতিক সংলাপের দায়িত্ব তাদের দেওয়া হয়নি। নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আশ্বস্ত করেছেন, ‘তিনি ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চান না। আমরা বলেছি, আরো সংলাপ প্রয়োজন ও নির্বাচনের রূপরেখা সবাইকে জানাতে হবে।’ গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন করে তবেই প্রধান উপদেষ্টার বিদায় নেওয়া উচিত। সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘মতপার্থক্য থাকলেও কার্যকর পথ নির্ধারণ করবে জনগণ। সময়ক্ষেপণ হলে পরিস্থিতি আরো জটিল হবে। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, মাঝ নদীতে মাঝি বদলানো ঠিক হবে না।’ জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, আমরা চক্রান্ত প্রতিরোধে আপনাকে সহযোগিতা করব।’ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি রেজাউল করীম বলেন, ‘আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, আপনি যদি পরাজিত হন, তবে আমরাও পরাজিত হব। প্রধান উপদেষ্টা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, ২০২৬ সালের ৩০ জুনের পর তাঁরা আর দায়িত্বে থাকবেন না।’ বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক বলেন, ‘আমরা বলেছি, শাপলা চত্বর থেকে জুলাই বিপ্লব পর্যন্ত যত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সেখানে শেখ হাসিনা ও তাঁর প্রধান সহযোগীদের বিচারের কার্যক্রম দৃশ্যমানভাবে অগ্রসর হোক। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। তিনি আমাদের বলেছেন, বিতর্কিত কোনো ইসলামবিরোধী আইন বাংলাদেশে কার্যকর করা হবে না।’ গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ‘আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, যেসব উপদেষ্টাকে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, বিশেষ করে ছাত্র আন্দোলন থেকে আসা ও সরকারে রয়েছেন তাঁরা যদি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তাহলে তাঁদের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে সরিয়ে দিলে সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষা পাবে।’ তিনি বলেন, ‘একটি মহল সামরিক বাহিনীসহ প্রশাসনকে সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে। আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, আপনি সামরিক বাহিনী ও প্রশাসনের আস্থা নিয়ে কাজ করুন।’ আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার পর যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে : প্রধান উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার পর দেশের ভেতরে ও বাইরে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এসব করা হচ্ছে দেশকে পিছিয়ে দেওয়ার জন্য এবং গোলামিতে ফেরত নিয়ে যাওয়ার জন্য। গতকাল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। বৈঠকের পর রাতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় সংবাদ সম্মেলনে প্রেস সচিব এ তথ্য জানান। শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা যত দিন আছেন, তত দিন দেশের অনিষ্ট হয় এমন কোনো কাজ তাঁকে (প্রধান উপদেষ্টা) দিয়ে হবে না বলে তিনি রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিশ্চিত করেছেন। শফিকুল আলম প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্ধৃত করে বলেন, দেশ বড় যুদ্ধাবস্থার ভেতরে আছে। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর ডিস্ট্যাবিলাইজ (অস্থিতিশীল) করার জন্য তারা সব রকম চেষ্টা করছে। এ থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, বিভাজন থেকে উদ্ধার পেতে হবে এবং ঐকমত্য থাকতে হবে। সবাই একসঙ্গে বসায় তিনি মনে সাহস পেয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন না করতে পারলে তিনি অপরাধ অনুভব করবেন। শফিকুল আলম জানান, বৈঠকে রাজনৈতিক দলের নেতারা সংস্কার, বিচার এবং নির্বাচন নিয়ে সরকার যে কাজ করছে, তাতে প্রধান উপদেষ্টাকে সমর্থন জানিয়েছেন। বৈঠকে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম এবং ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন বলে জানান শফিকুল আলম।