• শনিবার, ০৭ জুন ২০২৫, ০৯:১০ অপরাহ্ন

কবি নজরুল স্মৃতিকেন্দ্রে কমেছে দর্শনার্থী-পাঠক

নিজস্ব প্রতিবেদক / ৯ টাইম ভিউ
আপডেটঃ রবিবার, ২৫ মে, ২০২৫
Promi News BD

আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী। আজও সারা দেশে নানা আয়োজনে উদযাপিত হবে নজরুলজয়ন্তী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে তাঁর অন্তিম শয্যায় পুষ্পস্তবক অর্পণ করে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন অগণিত অনুরাগী।

এ বছরের শুরুতে কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। যদিও তাঁর জাতীয় কবির মর্যাদার বিষয়টি বহু আগে থেকেই প্রতিষ্ঠিত সত্য এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও স্বীকৃত ছিল। এ বছর জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান : কাজী নজরুলের উত্তরাধিকার’। জাতীয়ভাবে এবার জন্মবার্ষিকীর আয়োজন করা হয়েছে কবির স্মৃতিধন্য কুমিল্লায়।
 

কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন সাম্য, সম্প্রীতি, দ্রোহ, প্রেম ও গণমানুষের কবি। শৈশবেই লড়েছেন দারিদ্র্যের সঙ্গে। যৌবনে শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে চালিয়েছেন সংগ্রাম। শিকার হন নির্যাতন-নিপীড়নের।

তবু অন্যায়-অনাচারের বিরুদ্ধে তিনি ক্ষুরধার রচনা অব্যাহত রাখেন। কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছিলেন আপসহীন। অগ্নিবীণা হাতে ছিলেন ধূমকেতুর মতো। অন্যদিকে বাঁশের বাঁশি হাতে ছড়িয়েছেন প্রেমের বাণী। সংগীতে সৃষ্টি করেছেন স্বতন্ত্র ধারা।
তাঁর হাত ধরে প্রবর্তিত হয়েছে বাংলা গজল। 

এ দেশের আন্দোলন-সংগ্রামে বারবার ফিরে এসেছেন নজরুল। গত শতকের ষাট, সত্তর ও নব্বইয়ের দশকের প্রতিটি সংগ্রামে নজরুল ছিলেন সঙ্গী। সর্বশেষ চব্বিশের ছাত্র-জনতার আন্দোলনেও স্লোগানে, দেয়াল লিখনে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ছোট ছোট ভিডিওতে ছিল জাতীয় কবির গান-কবিতার উপস্থিতি। নজরুলের বাণী সংগ্রামী মনকে করে তোলে আরো দ্রোহী, আরো উদ্দাম।

বাংলা ১৩০৬ সনের ১১ জ্যৈষ্ঠ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোলের চুরুলিয়া গ্রামে জন্মেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। ১৯৭২ সালের ২৪ মে কলকাতা থেকে সরকারি উদ্যোগে সপরিবারে ঢাকায় আনা হয় তাঁকে। বসবাসের জন্য ধানমণ্ডির ২৮ নম্বর (পুরনো) সড়কের ৩৩০-বি বাড়িটি বরাদ্দ দেওয়া হয়। ১৯৭৬ সালের জানুয়ারিতে সরকার কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি তাঁকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তৎকালীন পিজি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন এই মহাবিদ্রোহী। কবির ইচ্ছানুসারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে তাঁর লাশ সমাহিত করা হয়।

নজরুলজয়ন্তীতে প্রধান উপদেষ্টার বাণী : বাসস জানিয়েছে, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস কবির স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে বাণী দিয়েছেন।

কর্মসূচি : জাতীয়ভাবে এবার জন্মবার্ষিকীর আয়োজন করা হয়েছে কবির স্মৃতিধন্য  কুমিল্লায়। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হবে। তিন দিনব্যাপী (২৫ থেকে ২৭ মে) অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। স্মারক বক্তব্য দিবেন অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। অনুষ্ঠানে মনোনীতদের হাতে ‘নজরুল পুরস্কার ২০২৩ ও ২০২৪’ তুলে দেওয়া হবে। রাজধানীতে আজ রবিবার বিকেল ৪টায় বাংলা একাডেমির উদ্যোগে রয়েছে সেমিনার ও নজরুল পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান। নজরুল লেখক ও গবেষক অধ্যাপক আনোয়ারুল হক ও নজরুল সংগীতশিল্পী শবনম মুশতারীকে দেওয়া হবে বাংলা একাডেমির ‘নজরুল পুরস্কার ২০২৫’।

আজ ও আগামীকাল ছায়ানটের আয়োজনে রয়েছে দুই দিনব্যাপী নজরুল উৎসব। ধানমণ্ডিতে ছায়ানট মিলনায়তনে প্রতিদিন অনুষ্ঠান শুরু হবে সন্ধ্যা ৭টায়। এতে পরিবেশিত হবে একক ও সম্মেলক গান, নৃত্য, পাঠ আবৃত্তি। জাতীয় কবির স্মৃতিবিজড়িত ময়মনসিংহের ত্রিশাল, মানিকগঞ্জের তেওতা, চুয়াডাঙ্গার কার্পাসডাঙ্গা এবং চট্টগ্রামে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ও স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় আজ জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হবে।

আগামীকাল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রাজধানীতে জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে ‘চেতনা ও জাগরণে নজরুল’ শীর্ষক অনুষ্ঠান।

অন্যদিকে আগামী শনিবার (৩১ মে) রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে ‘নজরুল কনসার্ট ২০২৫’-এর আয়োজন করেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউট।

এদিকে, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের শৈশবের কিছুদিনের স্মৃতি জড়িয়ে আছে ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালের কাজীর সিমলায়। কবির স্মৃতি ধরে রাখতে এখানে নির্মাণ করা হয়েছিল ‘কবি নজরুল স্মৃতিকেন্দ্র’। দিন যতই যাচ্ছে এই কেন্দ্রের রূপ ফিকে হচ্ছে। এরই মধ্যে কমেছে দর্শক, পাঠাগারের পাঠক। একসময় সেখানে পত্রিকা রাখা হলেও করোনা সংক্রমণের পর থেকে তা বন্ধ রয়েছে। জাতীয় কিছু দিবস ছাড়া কেন্দ্রের শত আসনের মিলনায়তনটিও বছরজুড়ে অব্যবহৃত থাকছে। এই কেন্দ্রে যাতায়াতের সড়কটিও সরু, বেশ কিছু স্থানে গর্ত ও ভাঙা।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, কবি নজরুল ময়মনসিংহে ছিলেন বছর দেড়েক। ১৯১৪ সালের জুনে পশ্চিমবঙ্গের আসানসোল থেকে এসেছিলেন কাজীর সিমলায়। গ্রামের বাসিন্দা কাজী রফিজ উদ্দিন ওই সময় আসানসোলে দারোগার চাকরি করতেন। সেখানেই তাঁর পরিচয় কবির সঙ্গে। রফিজ নজরুলকে কাজীর সিমলায় নিয়ে আসেন। ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন স্থানীয় দরিরামপুর হাইস্কুলে। কাজীর সিমলা থেকে স্কুলের দূরত্ব তখন চার-পাঁচ মাইল। কবিকে স্কুলের আরো কাছাকাছি বিচুতিয়া ব্যাপারীর বাড়িতে রাখার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। সেখান থেকে কবি যাতায়াত করতেন স্কুলে। তখন কবির বয়স ১৩-১৪ বছর। প্রায় দেড় বছর কাটানোর পর কবি চুরুলিয়ায় চলে যান। আর ময়মনসিংহে ফিরে আসেননি। দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ত্রিশালের নজরুল স্মৃতি বিজড়িত কাজীর সিমলা ও নামাপাড়ায় দুটি  আলাদা স্মৃতিকেন্দ্র নির্মাণ করেছিল সরকার। নামাপাড়ার স্মৃতিকেন্দ্রটি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে, তাই সেখানে লোকজনের আনাগোনা আছে। তবে অনেকটা অবহেলায় আছে কাজীর সিমলা কবি নজরুল স্মৃতিকেন্দ্র । জানা গেছে, ২০০৮ সালের ২৫ আগস্ট এই স্মৃতিকেন্দ্রটি উদ্বোধন করা হয়। নজরুল ইনস্টিটিউটের অধীন কেন্দ্রে ১০০ আসনের মিলনায়তন আছে। নজরুলসহ অন্যান্য লেখকের বই আছে পাঁচ হাজারেরও বেশি। এই কেন্দ্রে কবি নজরুলের ব্যবহৃত একটি খাটও আছে। শুক্র ও শনিবার ছাড়া সপ্তাহের অন্যান্য দিন এটি খোলা থাকে। গতকাল শনিবার স্মৃতিকেন্দ্রের বারান্দায় বসেই কথায় কথায় কাজী মো. সামিউল (৩২) বললেন, একসময় এখানে লোকজন বেশিই আসত, বইপত্র পড়ত। কিন্তু দিন দিন সবই কমেছে। এখানে আসার রাস্তাটিও ভালো না। পত্রিকা রাখাও বন্ধ রয়েছে। দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী কাজী মো. লিমন বলে, যদি কেন্দ্রটি শুক্র ও শনিবার খোলা থাকত তাহলে লোকজন বেশি আসত। স্মৃতিকেন্দ্রের লাইব্রেরিয়ান মো. রাসেল হোসাইন বলেন, আগের চেয়ে দর্শনার্থী কমেছে। কেউ এলে পুকুরঘাট, দারোগাবাড়ি ঘুরে দেখেন। ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল বাকীউল বারী বলেন, বিধ্বস্ত সড়কের খোঁজ নেবেন। দ্রুত তা সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এই বিভাগের আরো খবর