‘বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের পাঁচ দশক : নতুন উচ্চতায়’ শীর্ষক ওই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস)। অনুষ্ঠানে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা প্রসঙ্গে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, পরিস্থিতি শান্ত করতে উভয় দেশকে কাজ করতে হবে। উত্তেজনাও কমাতে হবে।
চলতি মাসের শেষ দিকে শত ব্যবসায়ী-বিনিয়োগকারীসহ দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী বাংলাদেশে আসছেন।
চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘স্থিতিশীলতা ছাড়া অগ্রগতি সম্ভব নয়। সংস্কার বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়।
রাখাইনের সঙ্গে মানবিক করিডর প্রসঙ্গে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘তথাকথিত মানবিক করিডর ইস্যুতে আমি বলব, চীন এতে জড়িত নয়। আমি যতটুকু বুঝি, এটি (মায়ানমারে) সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য রাখাইন রাজ্যে ত্রাণ সরবরাহে জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর একটি উদ্যোগ। এ বিষয়ে চীন জড়িত নয়।’
রাষ্ট্রদূত জোর দিয়ে বলেন, যেকোনো দেশের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি চীন সর্বদা শ্রদ্ধাশীল।
চীন কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে না। বাংলাদেশ ও মায়ানমার শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার যথাযথ সমাধান করবে এবং প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রদূত।
তিস্তা নদী সমন্বিত ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার প্রকল্পের (টিআরসিএমআরপি) হালনাগাদ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে দুই দেশের এক যৌথ সংবাদ বিবৃতির কথা উল্লেখ করেন ওয়েন। ওই বিবৃতিতে বাংলাদেশ চীনা কম্পানিগুলোকে এই প্রকল্পে অংশগ্রহণের জন্য স্বাগত জানিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমি বলব, এ বিষয়ে চীন প্রস্তুত রয়েছে। আমরা আমাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে চাই। এখন বাংলাদেশ এগিয়ে আসতে চায় কি না, সে সিদ্ধান্ত তাদেরই নিতে হবে।’
চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয়, ত্রিপক্ষীয়, নাকি আন্তর্জাতিক জোটের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে, সে বিষয়ে বলা যায়, এই প্রকল্পটি কিভাবে এগিয়ে নেওয়া হবে, তা সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশের নেওয়া সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে চীন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই প্রকল্পটি শুরু করা যেতে পারে। এটুকুই আমি বলতে চাই।’
এর আগে রাষ্ট্রদূত তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘চীন একটি বহুমেরুকেন্দ্রিক বিশ্বকে সমর্থন করে, যেখানে সার্বভৌমত্বের সমতার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব পায়। প্রতিটি দেশ, সেটি যত ছোট, শক্তিশালী বা ধনী হোক না কেন, সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদার পূর্ণ সম্মান পাওয়ার অধিকার রাখে।’
ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘কোনো দেশই অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না এবং প্রতিটি রাষ্ট্রেরই সামাজিক ব্যবস্থা ও উন্নয়নের পথ স্বাধীনভাবে বেছে নেওয়ার মৌলিক অধিকার রয়েছে।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমাদের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতা আরো জোরদার করার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে একমত হতে বাংলাদেশ-চীনের যৌথ অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য কমিশনের ১৫তম বৈঠক হবে।’
তিনি বলেন, তাঁরা বাংলাদেশি আম চীনে রপ্তানি ত্বরান্ব্বিত করছেন। এ বছরের জুনের প্রথম দিকে তাজা আমের প্রথম চালান চীনের বাজারে যাবে। এরপর বাংলাদেশি কাঁঠাল ও পেয়ারা আমদানির প্রক্রিয়াও চলমান।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমরা আশা করছি, বাংলাদেশ শিগগিরই চীনে ইলিশ রপ্তানির সুযোগ পাবে। সর্বোপরি চীনা খাদ্যপ্রেমীরা তাদের খাবারের টেবিলে এই সুস্বাদু মাছ উপভোগ করার জন্য অধীর আগ্রহে আর অপেক্ষা করতে পারছেন না।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের আরো উন্নতমানের কৃষিপণ্য চীনে আসার সঙ্গে সঙ্গে আরো বেশি চীনা কম্পানি এই উর্বর ভূমিতে বিনিয়োগ ও উদ্ভাবন নিয়ে আসবে। ফলে তারা অবশ্যই অবিশ্বাস্য কিছু ঘটতে দেখবে!