• রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫, ০৯:৫৭ অপরাহ্ন

সুদিনের আশায় মরিয়ম আর জুলিয়ারা লেগে আছেন শৈবাল চাষে

নিজস্ব প্রতিবেদক / ৩৯ টাইম ভিউ
আপডেটঃ বুধবার, ৭ মে, ২০২৫

কক্সবাজার জেলার নুনিয়াছড়া। বিমানবন্দরের কাছেই এর অবস্থান। জেলার সামুদ্রিক শৈবাল (সি–উইড) চাষের সবচেয়ে বড় জায়গা এটি। সেখানে থাকেন মরিয়ম (৫২)। ৯ বছর ধরে শৈবাল চাষ করছেন। তাঁর পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস এটি। প্রশিক্ষণ নিয়ে শৈবাল চাষে দক্ষতা অর্জন করেছেন। এবার ফলনও হয়েছে ভালো। তবে বেচতে গিয়ে হোঁচট খেতে হয়েছে এই নারীকে। ভালো দাম পাননি। গত বছরের চেয়ে কম দামে শৈবাল বিক্রি করতে হয়েছে মরিয়মকে।

গত ৯ এপ্রিল সরেজমিনে কক্সবাজারের উখিয়ার রেজুখালে কথা হয় শৈবালচাষি মরিয়ম, জুলেখা, নূর নবীদের সঙ্গে। তাঁরা বলেলেন, এবার ফলন ভালো হয়েছিল। খুশি ছিলেন তাঁরা। কিন্তু বিক্রি করতে গিয়ে সেই খুশি উবে গেছে।

আইজেক প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজার সদরের নুনিয়াছড়া, চৌফলদণ্ডী, উখিয়ার রেজুখাল ও মনখাল, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ এবং মহেশখালীর সোনাদিয়া পূর্বপাড়া ও সোনাদিয়া পশ্চিমপাড়ার ১২৩ জন নারী আর ৬০ জন পুরুষকে শৈবাল চাষে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণের পরে চাষের উপকরণ ও বীজ দিয়ে তাঁদের চাষাবাদে সহায়তা করা হয়েছে।

এই শৈবালচাষিরা আরও বলেন, এ পেশায় নারীরা সহজে যুক্ত হতে পারেন। তাঁদের হাতে টাকাপয়সা আসে। পরিবারের অভাব ঘোচে। তাই শৈবাল চাষের সম্ভাবনাকে যেন কাজে লাগানো হয়।

শৈবালচাষিরা কেন দাম পেলেন না—এমন প্রশ্নে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) কক্সবাজার কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোস্তাক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, এবার ফলন ভালো হয়েছে। কিন্ত বাজার বাড়েনি। তাই কম দামে শৈবাল বিক্রি করতে হয়েছে চাষিদের। বাজার বাড়ানোর জন্য কক্সবাজারে কারখানা স্থাপন করা গেলে শৈবাল থেকে আগার আগার পাউডারসহ বিভিন্ন উপকরণ বানানো সম্ভব।

মোস্তাক আহমেদ জানান, কক্সবাজারে শৈবাল চাষের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর বিষয়ে সরকারের ব্লু ইকোনমি (সমুদ্র অর্থনীতি) সেলের কয়েকজন কর্মকর্তা পরিদর্শন করে গেছেন। গত মাসে ইন্দোনেশিয়ার একটি দল শৈবাল চাষ ও বাজারজাত বিষয়ে আলোচনার জন্য এসেছিল।

সবুজ রঙের উলভা প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল
সবুজ রঙের উলভা প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবালছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা সালাদ ও সবজি হিসেবে অনেক আগে থেকেই থেকে ঔষধি গুণসম্পন্ন শৈবাল খেয়ে থাকেন। দেশে পরীক্ষামূলকভাবে বাণিজ্যিক শৈবাল চাষ শুরু হয়েছে ২০১৬ সাল থেকে, কক্সবাজারে।

সেন্ট মার্টিন সবচেয়ে বেশি প্রাকৃতিক শৈবালসমৃদ্ধ এলাকা। এর আগে সেখানে শৈবালের চাষ হয়েছিল। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রয়োজনে সেন্ট মার্টিনের শৈবাল বাণিজ্যিকভাবে তোলা হয় না বলে জানালেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এবার ফলন ভালো হয়েছে। কিন্ত বাজার বাড়েনি। তাই কম দামে শৈবাল বিক্রি করতে হয়েছে চাষিদের। বাজার বাড়ানোর জন্য কক্সবাজারে কারখানা স্থাপন করা গেলে শৈবাল থেকে আগার আগার পাউডারসহ বিভিন্ন উপকরণ বানানো সম্ভব।

মোস্তাক আহমেদ, জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) কক্সবাজার কার্যালয়

শৈবালের গুণাগুণ

বারির তথ্য অনুসারে, প্রাকৃতিক শৈবালকে পাউডার, ফ্লেক্স ও নির্যাসে রূপান্তর করা যায়। এগুলো প্যাকেটজাত করে খাবার, প্রসাধনী এবং ওষুধশিল্পে ব্যবহারের জন্য বিক্রি করা হয়। শৈবাল থেকে ক্যারেজিনান ও আগার নিষ্কাশন করা হয়; যা খাদ্য, পানীয় ও ডেজার্ট তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

শৈবালের অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি–এজিং বৈশিষ্ট্য এটিকে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় করেছে। দেশে বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় খাবারে শৈবাল ব্যবহার করা হয়। শৈবাল দিয়ে পাকোড়া, স্যুপ, নুডলস্‌, সালাদ, চাটনি, চকলেট ও জেলি তৈরি করা হয়। এটা শুকিয়ে গুঁড়া করে জৈব সার ও পশুর খাবার হিসেবেও বিক্রি করা হয়।

কক্সবাজারের শৈবালচাষি মরিয়ম
কক্সবাজারের শৈবালচাষি মরিয়মছবি: প্রথম আলো

দেওয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণ–সহায়তা

উখিয়ার রেজুখালের পাশে শৈবালচাষি হাজেরা খাতুন (৫৫) ও জুলিয়া বেগমের (২৬) বাড়ি। তাঁরা সম্পর্কে শাশুড়ি–পুত্রবধূ। ওই বাড়িতে কথা হয় মরিয়মের সঙ্গে। আরও ছিলেন হাফেজা খাতুন (৩৫)। তিনি চাষিদের কাছ থেকে শৈবাল সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করেন।

ইমপ্রুভিং স্কিলস অ্যান্ড ইকোনমিক অপরচুনিটিস ফর উইমেন অ্যান্ড ইয়ুথ ইন কক্সবাজার (আইজেক) নামের প্রকল্পের আওতায় এই চার নারী গত বছর দুটি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। শিক্ষা, কর্মসংস্থান বা প্রশিক্ষণের সঙ্গে যুক্ত নন কক্সবাজারের এমন ২৪ হাজার ৭৬০ জন কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, নারী এবং বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের বাজার উপযোগী কর্মসংস্থান আর স্বনির্ভর হাওয়ার সুযোগ সৃষ্টির জন্য ২০২৩ সালে আইজেক প্রকল্প শুরু হয়েছে।

লংলাইন ও ভাসমান ভেলা—এই দুই পদ্ধতিতে চাষ হয়। নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত চাষ করা যায়। শীতকালে বৃষ্টি কম হওয়ায় সাগরে পানির লবণাক্ততা ও স্বচ্ছতা বেশি থাকে। এটা শৈবাল চাষের জন্য খুব উপযোগী। এ সময় প্রাকৃতিকভাবে গ্রাসিলারিয়া উপকূলে পাওয়া যায়। সেগুলো কাটিং চাষের জন্য বীজ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত আইজেক প্রকল্পের আওতায় ১২ হাজার ৫১৭ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার অর্থায়নে ব্র্যাক, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এ বছরই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা।

প্রকল্পের আওতায় ইনোভিশন কনসালটিং নামের একটি প্রতিষ্ঠান কক্সবাজারের শৈবাল চাষিদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। আর প্রশিক্ষণ দিয়েছেন বারির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে ইনোভিশন কনসালটিংয়ের কর্মসূচি কর্মকর্তা আবু সাদাত মো. সায়েম প্রথম আলোকে বলেন, আইজেক প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজার সদরের নুনিয়াছড়া, চৌফলদণ্ডি, উখিয়ার রেজুখাল ও মনখাল, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ এবং মহেশখালীর সোনাদিয়া পূর্বপাড়া ও সোনাদিয়া পশ্চিমপাড়ার ১২৩ জন নারী আর ৬০ জন পুরুষকে শৈবাল চাষে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণের পরে চাষের উপকরণ ও বীজ দিয়ে তাঁদের চাষাবাদে সহায়তা করা হয়েছে।

বারির জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোস্তাক আহমেদ বলেন, এসব এলাকায় বেশির ভাগই জেলে পরিবার। বাড়ির পুরুষ সদস্যরা মাছ ধরার জন্য টানা ১৫ দিন থেকে এক মাস সাগরে থাকেন। তাই শৈবাল চাষে সফলতা বাড়াতে পরিবারের নারীদের বেশি করে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। কক্সবাজারে প্রায় ৫০০ জন শৈবালচাষি আছেন। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৪০০ জন নারী।

স্থানীয়দের চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কক্সবাজারের খুরুশপুলে শৈবাল চাষ হয় বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং চট্টগ্রাম ভেটেনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে। মহেশখালীতে এই কাজের তত্ত্বাবধান করে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। বেসরকারি সংগঠন আশা কাজ করছে শৈবাল চাষ নিয়ে।

 শৈবাল পরিষ্কারের কাজে ব্যস্ত এক নারী
শৈবাল পরিষ্কারের কাজে ব্যস্ত এক নারীছবি: আইজেক প্রকল্পের সৌজন্যে

যেভাবে চাষাবাদ হয়

বারি ও ইনোভিশন কনসালটিংয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দেশে কালো রঙের গ্রাসিলারিয়া এবং সবুজ রঙের উলভা প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল চাষ হয়।

লংলাইন ও ভাসমান ভেলা—এই দুই পদ্ধতিতে চাষ হয়। নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত চাষ করা যায়। শীতকালে বৃষ্টি কম হওয়ায় সাগরে পানির লবণাক্ততা ও স্বচ্ছতা বেশি থাকে, যা শৈবাল চাষের জন্য খুব উপযোগী। এ সময় প্রাকৃতিকভাবে গ্রাসিলারিয়া উপকূলে পাওয়া যায়। সেগুলো কাটিং চাষের জন্য বীজ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

লংলাইন পদ্ধতিতে দড়ি, বাঁশ ও ভাসমান উপকরণের মাধ্যমে শৈবাল চাষ করা হয়। এমন একটা জায়গা বেছে নিতে হয়, যেন ভাটার সময় শৈবাল পুরোপুরি ডাঙায় উঠে না আসে। আবার জোয়ারের সময় খুব বেশি পানির নিচে ডুবে না যায়। লংলাইন পদ্ধতিতে প্রতি শীত মৌসুমে পাঁচবার ফসল সংগ্রহ করা যায়। প্রায় ৯ কেজি ভেজা শৈবাল রোদে শুকানোর পর এক কেজি শুকনা শৈবাল পাওয়া যায়।

ভাসমান ভেলা পদ্ধতিতে সামুদ্রিক শৈবাল চাষের জন্য এমন একটা জায়গা বেছে নিতে হয়, যেখানে সমুদ্রের গভীরতা কমপক্ষে ৫ থেকে ১০ মিটার এবং ঢেউ মাঝারি থেকে কম। বাঁশ বা প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে ভেলা তৈরি করতে হয়।

এখন মৌসুম। ফলনও ভালো। তাই দাম কম পেয়েছেন চাষিরা। তবে মৌসুম শেষ হওয়ার পর কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ৫০০ টাকাতেও শৈবাল বিক্রি হয়।

আবু সাদাত মো. সায়েম, ইনোভিশন কনসালটিংয়ের কর্মসূচি কর্মকর্তা।

মরিয়ম ও হাফেজা জানালেন, ২১ দিনে একবার তাঁরা শৈবাল তুলতে পারেন। গভীর পানিতে চাষ হলে ১৪ দিনেই তোলা যায়। পরিষ্কার করার অংশে খুব মনোযোগ দিতে হয়। শৈবাল থেকে মাটি, বালু, শামুক, কাঁকড়া সরিয়ে ফেলতে হয়। পরিষ্কার লবণাক্ত পানি দিয়ে শৈবাল বার বার ধুতে হয়। কোমর পর্যন্ত খুঁটিতে বড় নেট বেঁধে তাতে ৩০ থেকে ৩৫ কেজি পরিমাণ ভেজা শৈবাল ধুয়ে নেন।

‘কচলে কচলে ধুতে থাকি। মুখে শৈবালের টুকরা নিয়ে পরীক্ষা করি, পরিষ্কার হলো কি না। ধোয়া শেষে মাচায় বিছিয়ে রোদে শুকাতে দিই। সকাল ১০টা থেকে ধোয়া শুরু করলে শেষ করতে করতে ১১টা থেকে সাড়ে ১১টা বেজে যায়। পরে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মাচায় শুকাই। এরপর বিক্রির জন্য প্যাকেট করি’, বলছিলেন মরিয়ম।

শৈবাল পরিষ্কারের কাজ করছেন দুজন নারী চাষি
শৈবাল পরিষ্কারের কাজ করছেন দুজন নারী চাষিছবি: আইজেক প্রকল্পের সৌজন্যে

শৈবাল অর্থনীতির আকার

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ‘সি–উইড ট্রেড অ্যান্ড মার্কেট পটেনশিয়াল’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে সামুদ্রিক শৈবালের বৈশ্বিক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ১৯ হাজার টনের বেশি, যার বাজারমূল্য ৩২১ কোটি ডলার বা সাড়ে ৩৪ হাজার কোটি টাকা।

সবচেয়ে বেশি শৈবাল উৎপাদন হয় ইন্দোনেশিয়ায়। এরপর রয়েছে চীন। বিশ্বজুড়ে শৈবালের চাহিদার ৬০ শতাংশ একাই সরবরাহ করে চীন, ২৫ শতাংশ ইন্দোনেশিয়া। এ তালিকায় আরও আছে দক্ষিণ কোরিয়া ও ফিলিপাইন। যদিও চীন শৈবালের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক দেশ। এরপর রয়েছে ফ্রান্স।

আরও পড়ুন

উপকূলে ভাসমান ভেলায় সামুদ্রিক শৈবালের চাষ, কম ঝুঁকিতে বেশি লাভ

কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল উপকূলে লোনা পানিতে বাঁশের ভেলায় চলছে পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাদ্য উপাদান শৈবালের চাষ

এদিকে দেশে কক্সবাজারে সাগরের বিভিন্ন চ্যানেলে ১০ হেক্টর এলাকায় চাষ করে ৫০০ টনের মতো কাঁচা শৈবাল উৎপাদন করা হয়। এর মধ্যে ১০ টনের বেশি কাঁচা শৈবাল বিক্রি হয়। বাকি শৈবাল শুকালে ৬২ টনের মতো পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে পায় ২ কোটি টাকার শৈবাল বিক্রি হয় বলে জানালেন বারির কর্মকর্তা মোস্তাক আহমেদ। তাঁর মতে, দেশের উপকূল অঞ্চলের ১৯ জেলাতেই শৈবাল চাষ করা প্রয়োজন।

মাচায় শৈবাল শুকাচ্ছেন মরিয়ম ও তাঁর স্বামী নুরুল আলম
মাচায় শৈবাল শুকাচ্ছেন মরিয়ম ও তাঁর স্বামী নুরুল আলমছবি: মরিয়মের সৌজন্যে

সুদিনের আশায় মরিয়মেরা

ছোট চাষিরা শৈবাল চাষ ও সংগ্রহের পর বড় চাষি ও সংগ্রাহকদের কাছে তা বিক্রি করেন বলে জানালেন জুলিয়া ও তাঁর শাশুড়ি হাজেরা। এবার প্রতি কেজি শৈবাল তাঁরা বিক্রি করেছেন ১০০ টাকায়।

ইনোভিশন কনসালটিংয়ের আবু সাদাত মো. সায়েম বলেন, এখন মৌসুম। ফলনও ভালো। তাই দাম কম পেয়েছেন চাষিরা। তবে মৌসুম শেষ হওয়ার পর কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ৫০০ টাকায়ও শৈবাল বিক্রি হয়।

মরিয়ম শৈবাল চাষ করেন, আবার সংগ্রহও করেন। ঢাকা, পটুয়াখালী, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান জেলার লামা, আলীকদমের ব্যবসায়ীরা তাঁর কাছ থেকে শৈবাল কেনেন।

মরিয়ম বললেন, গত বছর এক টনের কম শৈবাল বিক্রি করে পেয়েছিলেন ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এবার দেড় টন শৈবাল রয়েছে তাঁর কাছে। বড় পাইকারদের কাছে ১২০ টাকা, ছোট পাইকারদের কাছে ১৫০ টাকা এবং খুচরায় ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছেন। এখনো তাঁর কাছে ২৫০ কেজির মতো শৈবাল আছে। যদিও এবার শৈবালের দাম কম।

নুনিয়াছড়ার আরেক নারী হাফেজা খাতুন এখন আর নিজে শৈবাল চাষ করেন না। জুলেখাদের মতো চাষিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে বিক্রি করেন। হাফেজা প্রথম আলোকে বলেন, গতবার তিনি ৩০০ টাকা কেজিতে শৈবাল বিক্রি করেছিলেন। কিন্তু এবার দেড় শ টাকাও দাম পাচ্ছেন না।

পরিবারের অভাব–অনটন ঘোচানোর প্রত্যাশায় শৈবাল চাষে ঝুঁকেছেন মরিয়ম, জুলিয়া ও হাজেরার মতো উপকূলের নারীরা। এখন তাঁদের প্রত্যাশা, বাজার আরও বড় হবে। আরও ভালো দাম পাবেন তাঁরা। সংসারে অনটন ঘুচবে। এ প্রত্যাশা নিয়েই নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে শৈবাল চাষে লেগে রয়েছেন তাঁরা।

আরও পড়ুন

কর্মসংস্থানে নতুন পথ দেখাচ্ছে


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এই বিভাগের আরো খবর