গাজায় হত্যাযজ্ঞ চালিয়েই যাচ্ছে ইসরায়েল। গতকাল সোমবার সকালেই ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছে আরও ৬০ ফিলিস্তিনি। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত প্রাণহানি বেড়ে দাঁড়াল ৫০ হাজার ৭০০ জনে। আহত হয়েছেন ১ লাখ ১৫ হাজারের বেশি মানুষ।
হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে আজ মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আল-জাজিরা। এরই মধ্যে গাজা ভূখণ্ডের অর্ধেকই ইসরায়েলের দখলে গেছে বলে জানিয়েছে আল–জাজিরা।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজায় নতুন করে ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর এ পর্যন্ত বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৪ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি নাগরিক।
এদিকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের গ্রহণ করতে রাজি হতে পারে এমন কিছু দেশের বিষয়ে আলোচনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। গতকাল হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন নেতানিয়াহু।
আল-জাজিরার তথ্যমতে, আজ মঙ্গলবারও ভোর থেকেই গাজাজুড়ে ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আইডিএফ। নির্বিচারে বোমা হামলা আর গুলি চালিয়ে হত্যা করছে নারী–শিশুদের। উত্তর থেকে দক্ষিণ—পুরো উপত্যকাই চলছে নৃশংসতা। খান ইউনিসে নাসের হাসপাতালের পাশে সাংবাদিকদের তাঁবুর কাছেই একটি বাড়িতে বোমা হামলায় নিহত হয়েছেন নয়জন। ধারণা করা হচ্ছে, তারা সবাই একই পরিবারের সদস্য। গাজা সিটিতেও ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছে কমপক্ষে ৫ জন।
প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা খালি করার নির্দেশ দিচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। কিন্তু ওই এলাকা ছেড়ে কোথায় আশ্রয় নেবে ফিলিস্তিনিরা—তা স্পষ্ট করা হচ্ছে না।
এদিকে, আজ মঙ্গলবার আল-জাজিরা জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া এই সংঘাতে গাজা ভূখণ্ডের অর্ধেকই চলে গেছে ইসরায়েলের দখলে।
গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদে যখন যুক্তরাষ্ট্রসহ পুরো বিশ্ব উত্তাল, তখন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে হোয়াইট হাউসে আপ্যায়ন করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের এই আচরণ ক্ষোভ আরও উসকে দিচ্ছে।
ফিলিস্তিনি-মার্কিন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ওমর বাদ্দার আল-জাজিরাকে বলেন, ট্রাম্প ও নেতানিয়াহু এখনো গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছেন। যদিও আগে ধারণা করা হচ্ছিল যে তারা এই পরিকল্পনা পরিত্যাগ করেছেন।
তিনি এই দুই নেতার বৈঠককে ‘অত্যন্ত ঘৃণ্য’ বলে অভিহিত করেন এবং বলেন, ‘এই বৈঠক প্রমাণ করে যে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইসরায়েল মূলত এমন একটি রাষ্ট্র, যা সব নিয়ম বা আইনের ঊর্ধ্বে।’
বাদ্দারের মতে, গাজাকে বসবাসের অনুপযোগী করে তোলার জন্য ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুই দায়ী। তিনি বলেন, ‘তাঁরা বলছেন গাজা একটি বিপজ্জনক জায়গা, কিন্তু একে বিপজ্জনক করে তুলেছেন তাঁরাই—কারণ তাঁরা অবিরাম বোমা মেরে ধ্বংস করে চলেছেন, একে মানব বসবাসের অনুপযুক্ত করে তুলেছেন। আপনি যদি কোনো এলাকার অবকাঠামো ধ্বংস করেন, তারপর মানুষকে বলেন “থাকলে মরবেন, না হয় চলে যান”—এটি কোনোভাবেই স্বেচ্ছা পুনর্বাসন নয়। এটি পরিষ্কারভাবে সহিংস জাতিগত নির্মূল এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি—আর আমরা এখন সেটাই প্রত্যক্ষ করছি।’