• রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫, ০৩:৫৩ পূর্বাহ্ন

দেশের রপ্তানি বাড়ানোর নতুন দিগন্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক / ২২ টাইম ভিউ
আপডেটঃ বৃহস্পতিবার, ৩ এপ্রিল, ২০২৫

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরের মধ্য দিয়ে দেশটির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে নতুন সুযোগ দেখছে বাংলাদেশ। বিশেষত চীনে ২০২৮ সাল পর্যন্ত শতভাগ শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার ঘোষণা আরো আশান্বিত করেছে ব্যবসায়ীদের। যদিও এর আগে ৯৮ শতাংশ শুল্ক সুবিধা পাওয়ার পরও দেশটিতে রপ্তানি বাড়েনি। বেড়েছে আমদানি ব্যয়।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চীনে রপ্তানিতে ২০২০ সালে বাংলাদেশি ৯৭ শতাংশ পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা পেত। ২০২২ সালের আগে তা বাড়িয়ে ৯৮ শতাংশ করা হয়। এর মধ্যে চামড়া ও চামড়াজাতসহ ৩৮৩টি নতুন পণ্য ছিল। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশসহ এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর শতভাগ পণ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেয় চীন।

সে সুবিধা এবার ২০২৮ সাল পর্যন্ত বেড়েছে। 

এদিকে চীন সফরে দেশটির প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকের পর এ ঘোষণা আসে। তবে ছয় বছর ধরে শুল্ক সুবিধা পাওয়ার পরও চীনে তেমন বাড়েনি বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি। চীনে ২০১৮-১৯ অর্থবছরেও বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির অর্থমূল্য ছিল ৮৩ কোটি ডলার, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এসে দাঁড়ায় সাড়ে ৭১ কোটি ডলারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, চীন থেকে প্রতিবছর এখন অনেক বিনিয়োগ ভিয়েতনামে যাচ্ছে। ওই বিনিয়োগের মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্য চীনে রপ্তানি হচ্ছে। আমরাও যদি চীনের বিনিয়োগ বাংলাদেশে নিয়ে আসতে পারি, এরপর উৎপাদিত পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা কাজে লাগিয়ে দেশটিতে প্রবেশ করাতে পারি, সেটিই হবে বাংলাদেশের জন্য আদর্শ পরিস্থিতি। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের বিষয়ে কাজ চলছিল। যদিও সেগুলোর গতি এখন শ্লথ।

এই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করে চীনের কৌশলগত বিনিয়োগ সরিয়ে আনতে পারলে বাংলাদেশের প্রকৃত লাভবান হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। 

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর যদি কোনো দেশ ঐচ্ছিকভাবে শুল্কমুক্ত সুবিধায় প্রবেশাধিকার দিতে চায়, তারা সেটা দিতে পারে; ইউরোপীয় ইউনিয়ন যেমন বলছে গ্র্যাজুয়েশনের পর তিন বছর সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। এদিকে যুক্তরাজ্য বলছে, তিন বছরের জন্য এই সুবিধা দেওয়া হবে। সে ধারাবাহিকতায় চীন বলছে, ২০২৮ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় বাংলাদেশ থাকবে। প্রথমে ৬৩ শতাংশ পণ্যের ক্ষেত্রে চীনে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেত বাংলাদেশ। এরপর দিত ৯৭ শতাংশ পণ্যের জন্য। ২০২২ সাল থেকে প্রায় সব পণ্যের জন্যই শুল্কমুক্ত সুবিধা দিচ্ছে। এ সুবিধাই এখন অব্যাহত থাকবে ২০২৮ সাল পর্যন্ত।’

তিনি বলেন, ‘চীনে অনেক দিন ধরে অনেক পণ্যের জন্যই বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে। কিন্তু পণ্য সরবরাহ সক্ষমতার ঘাটতির কারণে সুবিধাটি ব্যবহার করতে পারেনি। আমাদের দেখতে হবে কিভাবে নিজস্ব বিনিয়োগ এবং বিদেশি বিনিয়োগ, বিশেষ করে চীনের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পারি, যাতে দেশটির বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা নিতে পারি।’

বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বলেন, ‘চীনের অভ্যন্তরীণ বাজারের আকার অনেক বড়। এতে বাংলাদেশি পণ্যের সুযোগ আছে। আর চীনের দেওয়া সহায়ক শুল্কনীতি কাজে লাগিয়ে বাণিজ্য বহুগুণ বাড়ানোও সম্ভব। এ ক্ষেত্রে শুধু পাটপণ্যকে যদি বিবেচনায় নিই, এই পণ্যের সর্ববৃহৎ বাজার হতে পারে চীন। এখনো তুরস্কের পর দেশের পাটপণ্যের দ্বিতীয় বড় বাজার চীন।’

চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ৯টি নতুন চুক্তি : অর্থনৈতিক, কারিগরি, বিদ্যুৎ, সংস্কৃতি ও বিনিয়োগ সহযোগিতা বাড়াতে ৯টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করেছে বাংলাদেশ ও চীন। প্রধান উপদেষ্টার চার দিনের চীন সফরের তৃতীয় দিন গত শুক্রবার দুই দেশের মধ্যে এই দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ও স্মারকগুলো স্বাক্ষরিত হয়।

সমঝোতা স্মারকগুলোর মধ্যে রয়েছে দুই দেশের কালজয়ী সাহিত্য ও শিল্পকর্মের অনুবাদ ও সৃজন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও খবর আদান-প্রদান, গণমাধ্যম, ক্রীড়া ও স্বাস্থ্য খাতে বিনিময় সহযোগিতা। এর পাশাপাশি, প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে দুই দেশের মধ্যে পাঁচ বিষয়ে সহযোগিতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়েছে।

এগুলো হলো বিনিয়োগ আলোচনা শুরু করা, চীনের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু, মোংলা বন্দরের আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণ, একটি রোবট ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণ এবং একটি কার্ডিয়াক সার্জারি গাড়ি অনুদান।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এই বিভাগের আরো খবর