যক্ষ্মা (টিবি) বাংলাদেশের জন্য একটি মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা। এটি একটি প্রাচীন রোগ, যা এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া থেকে হয়। মানুষ সাধারণত কাশির মাধ্যমে এটি ছড়িয়ে দেয়। আক্রান্ত ব্যক্তির কাশি, হাঁচি বা থুতু ছিটানোর মাধ্যমে বাতাসে টিবির জীবাণু ছড়ায়।
সম্প্রতি যক্ষ্মা নিয়ে বাংলাদেশে কিছু নতুন সমস্যা দেখা যাচ্ছে। উপসর্গ ছাড়াই অনেক রোগী শনাক্ত হচ্ছে। আক্রান্তরা বিষণ্নতায় ভুগলে তাদের মানসিক চিকিৎসা অনেকটাই উপেক্ষিত থাকছে।অন্যদিকে শিশুদের যক্ষ্মা শনাক্তে বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, যক্ষ্মা রোগীদের বিষণ্নতা যক্ষ্মা না থাকা মানুষের চেয়ে ৩.৭ গুণ বেশি। বিষণ্নতার কারণে যক্ষ্মা রোগী ঠিকমতো ফলোআপ চিকিৎসা না করানোর কারণে যক্ষ্মা রোগীদের মৃত্যুহার কমছে না।
সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী যক্ষ্মার (টিবি) নতুন রোগী শনাক্ত বেড়েছে। সংস্থাটির দেওয়া তথ্য মতে, বিশ্বের মোট যক্ষ্মা সংক্রমণের অর্ধেকের বেশি হয়েছে পাঁচটি দেশে।
সম্প্রতি যক্ষ্মা নিয়ে বাংলাদেশে কিছু নতুন সমস্যা দেখা যাচ্ছে। উপসর্গ ছাড়াই অনেক রোগী শনাক্ত হচ্ছে। আক্রান্তরা বিষণ্নতায় ভুগলে তাদের মানসিক চিকিৎসা অনেকটাই উপেক্ষিত থাকছে।
সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী যক্ষ্মার (টিবি) নতুন রোগী শনাক্ত বেড়েছে। সংস্থাটির দেওয়া তথ্য মতে, বিশ্বের মোট যক্ষ্মা সংক্রমণের অর্ধেকের বেশি হয়েছে পাঁচটি দেশে।
দেশের এমন পরিস্থিতির মধ্যে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস। ১৮৮২ সালের ২৪ মার্চ রবার্ট কচ যক্ষ্মা রোগের জীবাণু মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস আবিষ্কার করেন। এর আরো ১০০ বছর পর ১৯৮২ সাল থেকে এই দিনে গণসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস পালিত হয়ে আসছে। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘প্রতিশ্রুতি, বিনিয়োগ ও সেবাদান দ্বারা সম্ভব হবে যক্ষ্মামুক্ত বাংলাদেশ গড়া’।
যক্ষ্মা সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে, তার হাঁচি, কাশি বাতাসে ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। কথা থেকেও বাতাসে যক্ষ্মার জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে। একজন মানুষের কফ ছায়াহীন জায়গায় ফেললে বহুদিন জীবাণু বেঁচে থাকে। অপরিচ্ছন্ন, বদ্ধ, আলো-বাতাসহীন ঘরে এটি বেশি ছড়ায়। এক ঘরে বেশি মানুষ থাকলে এটি দ্রুত ছড়ায়। বিভিন্ন রকমের যক্ষ্মা রয়েছে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, তীব্র অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের মধ্যে যক্ষ্মায় আক্রান্তের হার অনেক বেশি। গত বছর (২০২৪ সালে) বাংলাদেশে শনাক্ত করা রোগীর ৫.২ শতাংশ শিশু। এর আগের বছর (২০২৩ সালে) শিশু যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছিল ৪.৪ শতাংশ। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় ০.৮ শতাংশ বেড়েছে।
সাধারণত যক্ষ্মা হলে বড়দের যে উপসর্গগুলো দেখা যায়, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে তার কিছু পার্থক্য রয়েছে। বড়দের ক্ষেত্রে ফুসফুসের যক্ষ্মা বেশি হয়ে থাকে। অন্যদিকে ফুসফুসের বাইরে যে যক্ষ্মাগুলো রয়েছে সেগুলো শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, ফুসফুসের যক্ষ্মার তুলনায় যেগুলো শনাক্ত করা মুশকিল। তাই শিশুদের যক্ষ্মা শনাক্ত হতে দেরি হয়।
শিশু এ রোগে আক্রান্ত হলে খাওয়াদাওয়ার পরও তার ওজন কমে যায় অথবা ওজন একই জায়গায় রয়ে গেছে, খাওয়ার রুচি চলে গেছে। অনেক সময় দেখা যায়, অন্য কোনো লক্ষণ নেই কিন্তু শিশু দুর্বল হয়ে পড়ছে, খেলছে না, সারা দিন ঝিমাচ্ছে, শুয়ে থাকতে চাইছে, খিটখিট করছে। যক্ষ্মার জ্বর সাধারণত ১০০ ডিগ্রির মতো থাকে। খুব উচ্চ তাপমাত্রা থাকে না। এই জ্বর সাধারণত সন্ধ্যার দিকে বা রাতে বেশি হয়ে থাকে এবং দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে হালকা জ্বর থাকছে, খুসখুসে কাশি, কফ, ঠাণ্ডা, সর্দি—এগুলোও বড় লক্ষণ। মনে রাখতে হবে, এগুলো যদি টানা দুই সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে থাকে, তবে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
লেখক : উপপরিচালক, ২৫০ শয্যা টিবি হাসপাতাল