প্রতিটা মানুষের মধ্যে এমন কিছু প্রতিভা লুকায়িত আছে বা সুপ্ত অবস্থায় রয়েছে, যা বিকশিত করতে পারলে অথবা জাগিয়ে তুলতে পারলে সাধারণ মানুষ অসাধারণে পরিণত হতে পারেন। নিজের চেষ্টার মাধ্যমে সবাই জ্ঞানী ও আলোকিত হতে পারেন।
আমরা যদি তথাগত বুদ্ধের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাব, বুদ্ধ বুদ্ধত্ব লাভের পূর্বে আমাদের মতোই রক্ত-মাংসে গড়া একজন সাধারণ মানুষ ছিলেন।
সর্বোপরি তিনি এ সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন যে আমাকে জন্ম-মৃত্যু ও দুঃখসমূহের মূল রহস্য উদঘাটন করতেই হবে। তিনি এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে এক আষাঢ়ী পূর্ণিমার গভীর নিশিতে সুন্দরী স্ত্রী যশোধরা, নবজাত পুত্র রাহুল, পিতা রাজা শুদ্ধোদন, বিলাসব্যসন, রাজসিংহাসন, রাজ্য সব কিছু ত্যাগ করে সন্ন্যাসব্রত অবলম্বনের মাধ্যমে বেছে নিলেন কঠিন সাধনার পথ। একাধারে ছয় বছর সাধনা করে অবশেষে গয়ার বোধিদ্রুম মূলে বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে সমস্ত মারসৈন্যকে পরাভূত করে বুদ্ধত্ব বা সম্বোধি লাভ করতে সমর্থ হলেন।
বুদ্ধ হলেন মুক্ত পুরু, পূজা-বন্দনার অতীত। পূজা হলো ত্যাগের মহিমা বিকাশের প্রক্রিয়া এবং বন্দনা বুদ্ধের গুণ-মহিমা অনুস্মরণ করার প্রক্রিয়া বিশেষ। এসব পূজা দুঃখমুক্তির জন্য যে নিতান্ত প্রয়োজন তা নয়। তবে এ পূজা-বন্দনা মানুষের পাপচিত্তকে সাময়িকভাবে হলেও শান্ত, পবিত্র করতে সহায়তা করে। মানুষের চিত্ত সতত লোভ, দ্বেষ, মোহ ইত্যাদি পাপধর্মে লিপ্ত থাকে। বন্দনা ও পূজার মূল উদ্দেশ্য হলো দুঃখমুক্তির সত্যদ্রষ্টা বা পথপ্রদর্শক হিসেবে বুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধা কিংবা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন। ধর্ম হলো দুঃখমুক্তির সেই একমাত্র পথকে অনুসরণ এবং সংঘ হচ্ছেন সেই জীবন্ত মুক্তি-পথযাত্রীর অনুগমন। বুদ্ধ, ধর্ম, সংঘকে পূজা করলে তাঁরা মুক্তি এনে দেবেন, এটা কোনো বৌদ্ধ বিশ্বাস করেন না। মুক্তি নিজের চেষ্টায় রচনা করতে হবে। তাই অলৌকিক শক্তির ওপর বিশ্বাস স্থাপন না করা বৌদ্ধ ধর্মের প্রধান বৈশিষ্ট্য। বুদ্ধ বলেন, ‘He honours me best who practice my teaching best. He who sees the Dhamma, sees me.’
বুদ্ধপূর্ণিমা : রাজকুমার সিদ্ধার্থের জন্ম, তাঁর বুদ্ধত্ব লাভ ও বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণ। বুদ্ধ জীবনের এ তিনটি প্রধান ঘটনা বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে সংঘটিত হয়েছিল বলে বৌদ্ধবিশ্বে এ পূর্ণিমাকে বুদ্ধপূর্ণিমা নামে অভিহিত করা হয়। জাতিসংঘ বৈশাখী পূর্ণিমাকে ‘আন্তর্জাতিক ভেসাক ডে’ নামে পালন করে থাকেন।
রাজা শুদ্ধোদন ও রানি মহামায়ার ঔরসে কুমার সিদ্ধার্থের জন্ম না হলে জগতে বুদ্ধের উৎপত্তি হতো না, জগতে বুদ্ধের উৎপত্তি না হলে জগৎ মহান্ধকারে নিমজ্জিত থাকত এবং মানুষ দুঃখের কশাঘাত থেকে কখনো মুক্তি লাভ করতে পারত না। তাই সমগ্র পৃথিবীতে বৈশাখী পূর্ণিমার গুরুত্ব অত্যধিক।
সমগ্র জগৎ বুদ্ধপূর্ণিমার আলোয় উদ্ভাসিত হোক। পৃথিবী আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে পরিপূর্ণতা লাভ করুক। জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা উপাধ্যক্ষ, ঢাকা আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহার, সিনিয়র সহসভাপতি, বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশন, লেখক ও সংগঠক