• শনিবার, ০৭ জুন ২০২৫, ১০:২২ অপরাহ্ন

পররাষ্ট্র উপদেষ্টার চীন সফরে সম্পর্কে যুক্ত হতে যাচ্ছে নতুন মাত্রা

নিজস্ব প্রতিবেদক / ৩৩ টাইম ভিউ
আপডেটঃ সোমবার, ২০ জানুয়ারী, ২০২৫
M Towhid Hossen pnb 14
M Towhid Hossen pnb 14

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওয়াং ই’র আমন্ত্রণে সোমবার বেইজিং যাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন। এই সফরের মধ্যে দিয়ে ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কে নতুন মাত্রা যুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে প্রতি বছরই পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে ভারতে যেতেন। প্রতিবেশী ও রাজনৈতিক সম্পর্কের কারণে প্রথম সফর হিসেবে ভারতকেই বেছে নিতেন তারা। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এবার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে চীনেই যাচ্ছেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, সোমবার (২০ জানুয়ারি) চীনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়বেন উপদেষ্টা। ২০ থেকে ২৪ জানুয়ারি চীন সফর করবেন তিনি। সফরকালে ২১ জানুয়ারি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং আইয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে করবেন। একইসঙ্গে বেইজিং ছাড়াও সাংহাই সফর করবেন উপদেষ্টা।

এই সফরের বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন বলেছেন, চীন সফরে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক অনেক বিষয়ে আলোচনা হবে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক ইস্যুগুলো। আমাদের অনেক প্রকল্পে চীনের বিনিয়োগ আছে। বিনিয়োগ মূলত ঋণ আকারে। তার মধ্যে কিছু প্রকল্প চলমান। এছাড়া, আরও অর্থনৈতিক আলোচনা আছে- যেমন আমরা ঋণের শর্তাদি নিয়ে কথা বলব। এর মধ্যে রয়েছে সুদহার কমানো বা ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো।

উপদেষ্টা বলেন, “এখনো চীন আমাদের অধিকাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিচ্ছে। কিন্তু এলডিসি থেকে গ্র্যাজুয়েশনের পরে এটা পরিবর্তন হতে পারে। তাই এটি আমাদের আলোচনার মাধ্যমে আগেই ঠিক করে নিতে হবে। চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্ণ হচ্ছে। এ উপলক্ষে দুই দেশেই কিছু উৎসব আছে। সেগুলো নিয়েও আমরা কথাবার্তা বলব।”

সফরসূচি প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, “২১ জানুয়ারি রাজধানী বেইজিংয়ে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে। তারপর সাংহাইয়ে একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে হবে। এর বাইরে বিদ্যুৎচালিত গাড়ির (ইভি) কারখানা এবং ফ্রুটস প্রিজারভেশন-সংক্রান্ত দুটি শিল্পকারখানা আমাদের দেখানো হবে। তাদের নতুন এসব টেকনোলজি আমাদের দেশে কাজে আসতে পারে।”

আগামীকাল মঙ্গলবার বসবে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক। আলোচনায় গুরুত্ব পাবে অর্থনীতি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ। সফরের আগে গতকাল রোববার পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন চীনের রাষ্ট্রদূত। চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, “পররাষ্ট্র উপদেষ্টার চীন সফর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি। এর মধ্যে দিয়ে ঢাকা-বেইজিং বোঝাপড়া আরো বাড়বে। আমরা খোলা মন নিয়ে বাংলাদেশের সব প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করতে প্রস্তুত।”

বাংলাদেশকে ১৯৭৫ সালের ৩১ আগস্ট স্বীকৃতি দেয় চীন । সে অনুযায়ী চলতি বছর দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করা হবে। এ লক্ষ্যে উভয়পক্ষই নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের কর্মসূচি নিয়েছে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার চীন সফরের সময়ে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে।

চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। বিশ্বের মধ্যে চীন থেকেই সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করে থাকে বাংলাদেশ। চীন থেকে বাংলাদেশ প্রতি বছর গড়ে দুই হাজার ৪০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে থাকে। বিপরীতে চীনে বাংলাদেশ রপ্তানি করে থাকে মাত্র ৬৭ কোটি ডলারের পণ্য। চীনা বাজারে বাংলাদেশ ৯৮ শতাংশ শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে থাকে। এরপরও চীনে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি বাড়ছে না। সে কারণে বাণিজ্য ভারসাম্যও রক্ষা করা যাচ্ছে না। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার চীন সফরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ভারসাম্য বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা উঠবে।

বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে নদী ও পানি ব্যবস্থাপনা সমঝোতা স্মারক রয়েছে। সেই সমঝোতা স্মারকের মেয়াদ এরইমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সফরে এই সমঝোতা স্মারক নবায়ন করা হবে। এছাড়া, বাংলাদেশের তিস্তা প্রকল্পে সহায়তা দিতে আগ্রহী চীন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সফরে বিষয়টি আলোচনায় উঠতে পারে।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এই বিভাগের আরো খবর