• রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫, ১০:৫১ পূর্বাহ্ন

রবীন্দ্রনাথের ফ্যাশন ও স্টাইল

নিজস্ব প্রতিবেদক / ১৫ টাইম ভিউ
আপডেটঃ বুধবার, ৭ মে, ২০২৫

সাহিত্যচর্চা, সংস্কৃতি অঙ্গনে অনন্য-সাধারণ অবদান রাখা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পোশাকে ছিল  নিজস্ব ঢঙের দারুণ ফ্যাশন। এই ফ্যাশন ছিল তাঁর নিজের তৈরি। সেই পোশাক তিনি একাই পরতেন। তাঁর সময়ে অন্য কোনো কবি বা সাহিত্যিককে সেই ফ্যাশনে দেখা যায়নি। নিজস্ব আঙ্গিকের পোশাকেই ছিল রবি ঠাকুরের বিশেষত্ব। নিজস্ব মননশৈলীতে তিনি এসব ফ্যাশনের সৃষ্টি করেছেন।

রবীন্দ্রনাথ ছিলেন বিশেষ ফ্যাশন বোদ্ধা। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত ছবির বই ‘Rabindranath Tagore : A Journey Through The Lenses’-এর প্রতি পৃষ্ঠা প্রমাণ করে কবি কতটা পোশাকের ডিজাইন সচেতন ছিলেন। ফ্যাশন নিয়ে নিজের ভাবনার কথা কবিগুরু তুলে ধরেছিলেন ‘শেষের কবিতা’তে। এই উপন্যাসে কবি বলেছেন, ‘ফ্যাশন হলো মুখোশ, স্টাইলটা হলো মুখশ্রী।’

হ্যাঁ, ফ্যাশনের পাশাপাশি স্টাইল সচেতনও ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। স্টাইলে তিনি জোব্বা ঢংয়ের পোশাক বেশি পরতেন। যদিও বয়সের ধাপে একেক সময় একেক পোশাকে দেখা গেছে প্রিয় কবিকে। যৌবনে স্যুট পরতে পছন্দ করতেন। কিন্তু পরিণত বয়সে তাকে স্যুট পরা দেখা যায়নি।

যা পরতেন কবিগুরুকে তাই মানিয়ে যেত। দীর্ঘ সুঠাম দেহের অধিকারী ছিলেন কবিগুরু। জোব্বা পোশাকের সঙ্গে ছিল তার বাবরি চুল। আর দাড়িতে তাকে বেশ লাগতো। তার প্রিয় পোশাক আলখেল্লা। এই আলখেল্লার আইকন হয়ে ওঠেন তরুণ বয়সে।বাল্মীকির প্রতিভা গীতিনাট্য করার সময় তাঁর এই পোশাক সবার নজরে আসে। ১৮৮১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারির জোড়াসাঁকো বাড়ির তেতলার ছাদে মঞ্চস্থ হয় নাটকটি। সেখানে রবি ঠাকুরের নতুন রূপ দেখে অনেকেই প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

বাল্মীকির পর কুষ্টিয়ার শিলাইদহে বাউল ফকিরদের সঙ্গে রবি ঠাকুরের পরিচয় হয়। সেখানে গিয়ে বাউল পোশাক তার নজর কাড়ে। বাউলদের জোব্বা ও রবীন্দ্রনাথের আলখেল্লা মিলে নেয় নব-রূপ। ধাপে ধাপে তিন ধারার মিলনে তৈরি হয় রবীন্দ্রনাথের জোব্বা।

১৯০৮ সালে শারদোৎসব নাটকে সন্ন্যাসীর ভূমিকায় অভিনয় করে রবীন্দ্রনাথ। ১৯১০-এ ‘রাজা’ নাটকে ঠাকুরদা চরিত্রে ছিলেন তিনি। কিন্তু সেখানে তার পাগড়ি ছিল না। গেরুয়া খিলকার ওপর ফুলের মালা পরেই মঞ্চে হাজির হন। সাদা রেশমের তৈরি পোশাকে ওপর ছিল চওড়া লাল কোমরবন্ধনী।

শান্তিনিকেতন আশ্রমে থাকার সময় রবীন্দ্রনাথ পরতেন সুতির লুঙ্গি। সঙ্গে থাকতো ঢিলেঢালা পাঞ্জাবি। তার সেই লুঙ্গির ডিজাইনেও ছিল নতুনত্ব। অনেকটাই লুঙ্গি আর পেটিকোটের রূপ ছিল সেটায়। রঙ ছিল সাদা কিংবা গেরুয়া।

রবি ঠাকুরকে সিল্কের লুঙ্গি পরতেও দেখা যায়। তাছাড়া তিনি পাঞ্জাবির ওপরে পরতেন দুটো জোব্বা। ভেতরের জোব্বাটি বুক ঢাকা। পুরাতন কুর্তার মতো বুকের ওপর আড়াআড়ি করে কোমরে বোতাম লাগিয়ে নিতেন। আর উপরেরটি ছিল গলা থেকে পা পর্যন্ত। সামনের দিকে সবটাই খোলা। পুরোটাই আলগা হয়ে ঝুলে থাকতো তাঁর গায়ে। কালো, বাদামি, গেরুয়া, নীল, খয়েরি, বাসন্তী, কমলা, মেঘ ছাই রঙের জোব্বা পরতে পছন্দ করবেন কবিগুরু।

রবি ঠাকুরের শীতকালের পোশাকেও ছিল ফ্যাশনের ছোঁয়া। পরতেন বিলিতি গ্রেট-কোট আর ভারতীয় শেরওয়ানির মিশেলে তৈরি নতুন পোশাক। কালো বা ছাই রঙের তৈরি হতো এই পোশাকগুলো। এর উপরে জড়াতেন শাল বা চাদর। আর মাথায় থাকতো সুতি কিংবা ভেলভেট ফেব্রিকের তৈরি টুপি।

রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন ২৫শে বৈশাখ। জন্মদিনেও বিশেষ পোশাকে দেখা যেত তাঁকে। কোঁচানো ধুতি আর গিলে করা পাঞ্জাবি পরতেন তিনি। সেই সঙ্গে গায়ে থাকতো বাটিকের উত্তরীয়। পায়ে পরতেন কটকি চটি বা নাগরা। তাছাড়া পৌষ উৎসবে বা উপাসনার সময় পরতের গরদের ধুতি আর পাঞ্জাবি।

বর্ষাকাল ছিল কবিগুরুর ভীষণ পছন্দের। ঋতু নিয়ে তিনি গান করেছেন, কবিতা লিখেছেন। ঋতু ধরে তিনি নিজের পোশাকের রঙ ও ধরন পাল্টে নিতেন। বর্ষার সময় তিনি পরতেন গাঢ় নীল জোব্বা।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের পোশাকে বদল হয়েছে। যোগ হয়েছে নতুন ডিজাইন। এক সময় তার  আলখেল্লার ঝুল নেমে এলো পায়ের গোড়ালিতে। দ্বিগুণ ঢোলা হলো হাতার ডিজাইন। তবে পোশাকে বোতামের পরিবর্তে ব্যবহার হলো ফিতা। গলাবন্ধ করে বানানো হতো পোশাকটি।

রবি ঠাকুরের সৃষ্টির প্রতিটি নাটকের পোশাক নিয়েও ভাবনার শেষ ছিল না। বাংলার কবি নবীনচন্দ্র সেন রবীন্দ্রনাথের শারীরিক সৌন্দর্য বর্ণনায় লিখেছেন, “…মুখাবয়ব দেখিলে চিত্রিত খ্রিস্টের মুখ মনে পড়ে।”

আশি বছর বয়সের রবীন্দ্রনাথকে দেখে কবি বুদ্ধদেব বসু তাঁর রূপে মুগ্ধ হয়েছিলেন। লিখেছিলেন, অমন রূপবান হতে বুঝি অত বছর সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।

বার্লিনে রবীন্দ্রনাথকে দেখে ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূত লেখেন, “He was more impressive in appearance than mos


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এই বিভাগের আরো খবর