আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নে ঘাটতি নির্ভরতা পরিহার করে বাস্তবভিত্তিক বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। মঙ্গলবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, “ব্যাংক থেকে ধার করে বা টাকা ছাপিয়ে আমরা বাজেট বাস্তবায়ন করব না। বড় বড় মেগা প্রকল্পের জন্য অনিয়ন্ত্রিত ঋণ নেয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। বাস্তবমুখী উন্নয়নই হবে আমাদের অগ্রাধিকার।”
অর্থ উপদেষ্টা আরও জানান, বাজেটে সীমিত পরিসরে ঘাটতি থাকলেও তা পোষাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা চলছে। তার ভাষায়, “সেখানে আমরা মোটামুটি সফল।”
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভেঙে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি পৃথক বিভাগ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যে অর্থ উপদেষ্টা নিশ্চিত করেছেন যে, এতে রাজস্ব কর্মকর্তাদের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না বরং এটি একটি আন্তর্জাতিকভাবে প্রচলিত মডেল।
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, “নীতিনির্ধারণী বিভাগটি ছোট একটি ইউনিট হবে এবং একে পেশাদার অর্থনীতিবিদ, পরিসংখ্যানবিদদের দিয়ে পরিচালিত করা হবে। এনবিআর আগের মতোই রাজস্ব আদায়ের দায়িত্বে থাকবে।”
তিনি আরও বলেন, “পলিসি তৈরি এবং বাস্তবায়ন—এই দুটি দায়িত্ব একসঙ্গে থাকলে স্বার্থের সংঘাত তৈরি হয়। তাই আলাদা বিভাগ করাই যৌক্তিক এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।”
একই সঙ্গে তিনি এনবিআরের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, “তাদের স্বার্থ পুরোপুরি সংরক্ষিত আছে। কারও দুশ্চিন্তার কিছু নেই। সদস্য পর্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
বর্তমান রাজস্ব সংগ্রহ পরিস্থিতি সম্পর্কে অর্থ উপদেষ্টা জানান, “গত অর্থবছরের তুলনায় এ বছর এখন পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ে ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এটি মোটেও হতাশাব্যাঞ্জক নয়। বরং আমরা আরও উন্নতি প্রত্যাশা করছি।”
অর্থ উপদেষ্টার মতে, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে, বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্পে বিনিয়োগ করে এবং প্রাসঙ্গিক আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তা নিয়ে একটি সুসংহত, সংকটমুক্ত বাজেট বাস্তবায়নই হবে সরকারের প্রধান লক্ষ্য।
এ সময় বৈঠকে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত ১২টি প্রস্তাবের মধ্যে ১০টি অনুমোদিত হয়। উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে—গানভর সিঙ্গাপুর থেকে এলএনজি আমদানি এবং টিসিবির জন্য ১ কোটি ১০ লাখ লিটার রাইস ব্র্যান অয়েল কেনা।