• মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫, ০৩:২৯ অপরাহ্ন

কর ব্যবস্থার আমূল সংস্কারে এনবিআর বিলুপ্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক / ৫৫ টাইম ভিউ
আপডেটঃ বৃহস্পতিবার, ১৫ মে, ২০২৫
এনবিআর
এনবিআর

বাংলাদেশে করনীতি ও করব্যবস্থাপনায় দীর্ঘদিনের জটিলতা, স্বার্থের সংঘাত এবং অদক্ষতা নিরসনের লক্ষ্যেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে দুটি পৃথক বিভাগ—রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ—গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। গত ১২ মে জারি করা ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ ২০২৫’-এর মধ্য দিয়ে কার্যকর হয়েছে এই কাঠামোগত রূপান্তর। সরকার এটিকে শুধুমাত্র একটি প্রশাসনিক পুনর্গঠন নয়, বরং “ন্যায়ভিত্তিক ও দক্ষ করব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ” হিসেবে উল্লেখ করেছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, প্রায় পাঁচ দশক ধরে এনবিআর কাঠামোটি দেশকে প্রত্যাশিত রাজস্ব আহরণে সহায়তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমানে দেশের কর-জিডিপি অনুপাত মাত্র ৭.৪ শতাংশ, যা এশিয়ার সর্বনিম্ন এবং বৈশ্বিক গড় (১৬.৬%) ও মালয়েশিয়ার (১১.৬%) তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। সরকারের লক্ষ্য, এই অনুপাত অন্তত ১০ শতাংশে উন্নীত করা।

প্রেস উইং আরও জানায়, নীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন একই প্রতিষ্ঠানের হাতে থাকার কারণে স্বার্থের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। একদিকে নীতি প্রণয়নকারী কর্মকর্তারা কর আদায়েও জড়িত, ফলে গোপন সমঝোতা ও অনিয়মের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কর আদায়কারী কর্মকর্তাদের কর্মদক্ষতা মূল্যায়নের জন্য কোনো বস্তুসম্মত কাঠামো নেই, নেই প্রণোদনা ও পদোন্নতির নির্দিষ্ট সূচক।

বর্তমান কাঠামোতে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের প্রধানই ছিলেন এনবিআরের প্রধান, যার ফলে নেতৃত্বে দ্বৈততা ও বিভ্রান্তি তৈরি হয়। একইসঙ্গে করজাল সম্প্রসারণে ব্যর্থতা, দুর্বল আইন প্রয়োগ, বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশের অভাব এবং সুশাসনের ঘাটতির কারণে এনবিআর জনগণের আস্থা হারিয়েছে। এ অবস্থায় সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য ছিল।

নতুন কাঠামোয় রাজস্ব নীতি বিভাগ হবে কর আইন প্রণয়ন, হার নির্ধারণ এবং আন্তর্জাতিক করচুক্তি পরিচালনার দায়িত্বে। অন্যদিকে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ দেখবে কর আদায়, নিরীক্ষা (অডিট) ও আইনের বাস্তবায়ন। এতে কর নির্ধারক ও কর আদায়কারীর ভূমিকা আলাদা হবে, যা অনিয়ম রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে সরকার।

সরকার বলছে, এই পৃথকীকরণের মাধ্যমে স্বার্থের দ্বন্দ্ব কমে আসবে, বিশেষায়িত দক্ষতা বাড়বে, এবং প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হবে। একইসঙ্গে প্রত্যক্ষ কর আদায় বাড়িয়ে পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরতা কমানো সম্ভব হবে।

নিরপেক্ষ ও পেশাদার নীতিনির্ধারণী ইউনিট থাকলে রাজস্ব লক্ষ্যের বাইরেও একটি দূরদর্শী, তথ্যভিত্তিক করনীতি গড়ে তোলা সম্ভব হবে। এতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে এবং বেসরকারি খাত থেকে আসা অভিযোগ কমে আসবে।

প্রেস উইং বলছে, “এটি কেবল প্রশাসনিক সংস্কার নয়; বরং একটি সুসংগঠিত, ন্যায়নিষ্ঠ এবং জনবান্ধব করব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।”

যদিও সরকার নতুন কাঠামোয় প্রশাসন ক্যাডারের পাশাপাশি আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তাদের যুক্ত করেছে, তথাপি এনবিআরের অনেক অভিজ্ঞ কর্মকর্তার মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে—তাঁরা হয়তো উপেক্ষিত বা কোণঠাসা হয়ে পড়বেন। সরকার এই উদ্বেগ প্রশমনের জন্যই প্রেস উইং থেকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এই বিভাগের আরো খবর